পুলিশ সুপার হিসেবে ময়মনসিংহে যোগদানের পরপরই সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন মাছুম আহাম্মদ ভূঞা। জেলার বিভিন্ন সমস্যা-সংকট নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা খোলামেলা কথা বলেছেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে। সমস্যাগুলো সমাধানে আন্তরিক চেষ্টার পাশাপাশি জেলার উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং পুলিশি সেবা নিয়ে নানান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নবাগত এ পুলিশ সুপার।

তিনি বলেছেন, হয়রানিমুক্ত-দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ সেবা উপহার দিতে চাই। পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় আমরা পৌঁছে দিতে শতভাগ চেষ্টা করব। শুরুর দিন যে প্রতিশ্রুতি দিলাম, তা কতটুকু রাখতে পেরেছি তা বিদায়ের দিন আপনারই মূল্যায়ন করবেন।
 
শনিবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পুলিশ সুপার।

সেবা নেওয়ার জন্য থানা বা এসপি অফিসে আসতে হবে না, মানুষের দরজায় পুলিশি সেবা যাবে উল্লেখ করে মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য বিট পুলিশিংকে আরও জোরদার করব। বিট অফিসাররা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে সমস্যা শুনবেন এবং সমাধানে উদ্যোগ নেবেন। পাশাপাশি টেলি বিট পুলিশিংয়ের অগ্রগতিতে কাজ করব। বিট অফিসাররা প্রতিদিন দুজন ব্যক্তিকে কল দিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং এলাকায় কোনো ধরনের সমস্যা আছে কিনা তা জানবেন। আমরা চাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশিংটা করতে। জনগণ, সুশীল সমাজ এবং সিভিল সোসাইটিসহ সবাইকে নিয়েই আমরা জনঅংশীদারিত্বমূলক পুলিশিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করব।

গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে ময়মনসিংহের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনার পর এসপি মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, যেখানে সমস্যা আছে, সেখানেই সমাধান রয়েছে। আমি সমস্যাগুলো শুনলাম। এগুলো হয়তো রাতারাতি সমাধান করতে পারব না, কিন্তু অবশ্যই আমাদের আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব এবং চেষ্টা দ্বারা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারবো বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যেখানে শতভাগ সমস্যা রয়েছে সেটাকে কমিয়ে অর্ধেকের নিচে কিভাবে নামিয়ে আনা যায় সেই চেষ্টা আমার থাকবে। ময়মনসিংহের মানুষের যে কোনো সমস্যা লাঘবের ক্ষেত্রে আমাকে সবসময় পাশে পাবেন।

নিরাপত্তার ব্যাপারে জোর দিয়ে পুলিশ সুপার বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের যে জনতার পুলিশ সেটা যদি আমরা করতে পারি তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া সম্ভব। ২০৪১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সুখী-সমৃদ্ধ একটি আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি এবং সেদিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এজন্য কিন্তু আমাদের সেরকম নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কারণ নিরাপত্তা হচ্ছে অক্সিজেনের মতো। অক্সিজেন ছাড়া যেমন বাঁচা যায় না তেমনি দেশের উন্নয়নসহ সবকিছুর মূলেই রয়েছে নিরাপত্তা। এই বোধটা আমি ময়মনসিংহবাসীর মনে জাগিয়ে তুলতে চাই।

যে কোনো অন্যায়-অবিচারের ব্যাপারে সর্বোচ্চ কঠোরতার ঘোষণাও দিয়েছেন নতুন এ পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, আমার জ্ঞাতসারে আমি কোনো ইনজাস্টিস হতে দেব না। আমি বেঁচে থাকতে সেটি কোনোভাবেই হতে দেব না। কেউ কোনো অন্যায় অবিচারের শিকার হলে তা সরাসরি আমি নিজে দেখব। এ ব্যাপারে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যে লোকটি গ্রাম থেকে লুঙ্গি-ছেড়া গেঞ্জি পড়ে উপায়ান্তর না পেয়ে অবশেষে আমার অফিসে আসবেন, সবার আগে সেই অসহায় লোকটির সহযোগীতায় কাজ করব ইনশাআল্লাহ।

সাধারণ ডায়েরি নিয়ে নতুন পরিকল্পনার কথাও- জানান পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা। বলেন, অ্যাকশনেবল জিডি নামে একটি রেজিস্ট্রার খুলব। সেই তালিকার জিডিগুলো এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। জিডি রুজু হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ অফিসারকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থায় কাজ শুরু করতে হবে। সার্কেল অফিসাররা এটি মনিটর করবেন এবং প্রতি মাসে আমাকে রিপোর্ট দিতে হবে। কত শতাংশ জিডি নিষ্পত্তি হলো এটি আমি নিজে দেখব। পাশাপাশি জিডি এবং মামলা মনিটরিংয়ের জন্য এটি আলাদা সেল করা হবে। মানুষের ন্যায় বিচারের জন্য এগুলো আমি নিশ্চিত করব।

প্রসঙ্গত, ৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে জয়পুরহাট থেকে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশে পদায়ন হন এসপি মাছুম আহাম্মদ ভূঞা।

উবায়দুল হক/এমএএস