ঋণের দায়ে স্বামী-স্ত্রীর বিষপান, স্ত্রীর পর চলে গেলেন স্বামীও
নাটোরের বড়াইগ্রামে সুদের চাপ ও পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে ইঁদুর মারার বিষাক্ত ট্যাবলেট খেয়েছেন। এ ঘটনায় স্ত্রী বিথী খাতুন (২৬) মারা যাওয়ার ১২ ঘণ্টার পর স্বামী ওমর ফারুকও (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শনিবার (২৭ আগস্ট) সকালে ফারুকের মরদেহ নাটোর মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওমর ফারুক উপজেলার বনপাড়া কালিকাপুর এলাকার মফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং বিথী খাতুন লালপুর উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের পানঘাটা গ্রামের বাছের উদ্দিনের মেয়ে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) রাত পৌনে ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফারুক মারা যান। এর আগে সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিথীর মৃত্যু হয়।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, প্রায় দেড় বছর আগে ফল ব্যবসায়ী ওমর ফারুকের সঙ্গে বিথীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর বড়াইগ্রাম হালদারপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তারা। ফারুক দ্বিতীয় বিয়ে করা নিয়ে তাদের সংসারে কলহ চলছিল। তাছাড়া বিভিন্ন এনজিও এবং মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া ছিল তার। ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় বেশির ভাগ সময় দোকান বন্ধ রেখে তিনি বাসাতেই থাকতেন।
শুক্রবার সকালে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে ইঁদুর মারার বিষাক্ত ট্যাবলেট খান। পরে তারা হেঁটে ফারুকের বাবার বাড়িতে যান। এ সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্বজনরা উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিথীর মৃত্যু হয়। পরে ওমর ফারুককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ১১টায় দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারও মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে ফারুকের সঙ্গে থাকা বোন মায়া খাতুন বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু চিকিৎসকরা তার সুস্থ হওয়ার আশা ছেড়ে দিলেন। মহাজনদের চাপে এক দিনে ভাই-ভাবী দুজনকেই হারালাম। এখন আমার ভাইয়ের সন্তানদের কে দেখবে?
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক জানান, ফারুকের দুটি সংসার ছিল। সে তার ছোট স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা ভাড়া বাসায় থাকতেন। ঋণের দায়ে তারা অনেকটাই বিপর্যস্ত ছিল। কোনো উপায় না পেয়ে একসঙ্গে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তাপস কুমার/এসপি