‘আগের মজুরিতেই যদি কাজে ফিরতে হয়, তাহলে ধর্মঘট করলাম কেন’
চা-শ্রমিকদের আন্দোলন নতুন মোড় নিয়েছে। গতকাল রোববার (২১ আগস্ট) রাতে মৌলভীবাজারে প্রশাসনের সঙ্গে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বৈঠকে কাজে যোগ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন সাধারণ শ্রমিকরা। তারা ‘রাতের অন্ধকারের সিদ্ধান্ত’ মানেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলনে অনড় রয়েছেন শ্রমিকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রোববার রাত ৯টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। দীর্ঘ সেই বৈঠক শেষ হয় রাত ৩টার দিকে।
বিজ্ঞাপন
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সোমবার থেকে শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে যোগ দেবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলে নিজেদের দাবি-দাওয়া জানাবেন তারা।
কিন্তু গভীর রাতে শেষ হওয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত সকালে জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন চা-শ্রমিকরা। বিভিন্ন ভ্যালি এবং পঞ্চায়েত কমিটির নেতারাও কেন্দ্রীয় নেতাদের ওই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কমিটির ওপরই অনাস্থা প্রকাশ করেছেন ভ্যালি এবং পঞ্চায়েত কমিটির নেতারা। সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে তারা ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
মৌলভী চা-বাগানের শ্রমিক চন্দ্র বলেন, চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে কোনো ভ্যালি বা পঞ্চায়েত কমিটির সঙ্গে কথা বলেনি। তারা এখন শ্রমিকদের জোরপূর্বক কাজে যোগ দেওয়াতে চাইছে। আগের মজুরিতেই যদি কাজে ফিরতে হয়, তাহলে আমরা কেন এতদিন না খেয়ে ধর্মঘট করলাম?
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ৮ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন চা-শ্রমিকরা। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট। সেই ধর্মঘট গতকাল রাতে শেষ হয়েছে, এমনটাই ধারণা ছিল সবার।
গতকাল রোববার রাত ৯টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। দীর্ঘ সেই বৈঠক শেষ হয় রাত ৩টার দিকে। মূলত সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে এই বৈঠক ডাকে স্থানীয় প্রশাসন।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের প্যাডে দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তার সম্মানে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে সোমবার কাজে যোগ দেবে। আপাতত চলমান মজুরি ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকরা কাজ করবেন।
এদিকে শ্রমিকরা ওই সিন্ধান্ত না মানায় গা ঢাকা দিয়েছেন চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সাংগঠনিক সম্পাদক নিপেন পাল নিজে ফোন রিসিভ না করে বাড়িতে থাকা নারী সদস্যকে দিয়ে ফোন রিসিভ করিয়ে অসুস্থ থাকার কথা জানিয়েছেন।
অন্য দিকে বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরার ফোনে ঘণ্টাখানেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। প্রথমে কল ঢুকলেও পরবর্তীতে ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলামের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি। এমনকি কয়েকবার ওয়েটিংয়ে পাওয়ার পরও কল রিসিভ কিংবা কল ব্যাক করেননি তিনি।
ওমর ফারুক নাঈম/আরএআর