শিশুটিকে ফেলে গেলেন ডাক্তারের সহযোগী, রক্ষা করল পুলিশ
বাবা ননী বাড়ৈ প্রতিবন্ধী। জন্মের পরই ফেলে চলে গেছেন মা। জ্যাঠিমা ও বাবার কাছে থেকে বড় হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার পর মহামারি করোনার কারণে অচল বিশ্বে সংসারের অনটন আরও প্রকট হয়। উপজেলার বাসিন্দা ডা. সিএইচ রবিনের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে নেওয়া হয় ১১ বছরের শিশু নিপা বাড়ৈকে।
ডা. সিএইচ রবিন রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) অর্থোপেডিক ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ। সেখানে ভালো থাকার কথা ছিল নিপা বাড়ৈর। কিন্তু তিনদিনের মধ্যেই নেমে আসে নির্যাতন।
বিজ্ঞাপন
ডা. সিএইচ রবিন এবং তার স্ত্রী রাখি দাস মিলে মারধর করতেন শিশুটিকে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের গভীর ক্ষত। ঢাকায় বিষয়টি জানাজানি হলে গোপনে ডা. সিএইচ রবিন তার চেম্বারের সহকারী বাসু হালদারকে দিয়ে গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামে পাঠিয়ে দেন নিপাকে।
বাসু হালদার নির্যাতিত নিপা বাড়ৈকে অসুস্থ অবস্থায় তার বাবার কাছে পৌঁছে না দিয়ে চায়ের দোকানের সামনে ফেলে রেখে চলে যান। ঢাকা পোস্টকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন উজিরপুর থানা পুলিশের ওসি জিয়াউল আহসান।
তিনি বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা থেকে নিপাকে নিয়ে এসে উত্তর জামবাড়ি এলাকার একটি দোকানের সামনে ফেলে চলে যান বাসু হালদার। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকায় ওই চিকিৎসকের বাড়ির ঠিকানা খুঁজছি।
জিয়াউল আহসান বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিশুটি বর্তমানে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শামসুদ্দোহা তৌহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশুটির শরীরের ক্ষত সারলেও মানসিক ক্ষত ঠিক হতে অনেকদিন লাগবে। তার শরীরের আঘাত দেখে মনে হচ্ছে তাকে ধাতব দণ্ড দিয়ে এবং নানাভাবে আঘাত করা হয়েছে। শরীরে আঘাত অনেক পুরোনো। দেখে মনে হয়েছে অনেকদিন ধরেই সে নির্যাতনের শিকার। মাথায়ও আঘাত রয়েছে।
শিশুটির জ্যাঠিমা মুক্তি বাড়ৈ বলেন, ডা. সিএইচ রবিনের বাসায় কাজে দিয়েছি ছয় মাস হয়েছে। সেখানে দেওয়ার তিনদিন পরেই নির্যাতন শুরু করে রবিনের স্ত্রী রাখি দাস। নিপার শরীরে আঘাতের চিহ্নের অভাব নেই। শরীরে খুন্তির ছ্যাঁকা ও আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। আমরা এ নির্যাতনের বিচার চাই।
সৈয়দ মেহেদি হাসান/এমএএস/আরএআর