কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর এতেই তলিয়ে গেছে বরিশাল শহর। শহরের মূল সড়ক সদর রোডে থই থই করছে পানি। ওদিকে দিনভর টানা বৃষ্টিতে সেই পানির উচ্চতা বাড়িয়েছে। নদীতে পানির উচ্চতা ও তুমুল বর্ষণে ধীরে ধীরে খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে আবহাওয়া।

বিভাগের সবচেয়ে উঁচু শহর বরিশালের চিত্র এমন। শুধু বরিশাল শহর নয় বিভাগের ছয়টি জেলা সদর এবং ৪২টি উপজেলা সদরের চিত্র এর থেকেও বেশি ভোগান্তির। দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার পরিবার। যদিও আবহাওয়া দফতর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে এমন আবহাওয়া আরো দুইদিন বিরাজমান থাকবে। এরপরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।

বৈরী আবহাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। সড়কে কমে এসেছে যানবাহন ও মানুষ। শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। পানি দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী না হলেও ক্ষতিরমুখে পড়তে পারেন বলে শঙ্কা কৃষক ও মাছ চাষিদের।

সরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক দেবাশীষ কুন্ডু বলেন, টানা বৃষ্টিতে অফিসে সময়মতো পৌঁছানো কষ্টসাধ্য। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বরিশাল নগরীর প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়তে দেখেছি।

রিকশাচালক আউয়াল ফরাজী বলেন, শহরে গাড়ি চালানো যায় না। সব রাস্তায় পানি উঠে গেছে। তাছাড়া বৃষ্টিতে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। বিগত দুইদিন বৃষ্টির কারণে নামিনি। কিন্তু ঘরে সওদা না থাকায় আজ এসে দেখি আগের অবস্থার চেয়ে বেশি খারাপ।

একটি সুপারশপের কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় বিক্রি কমে এসেছে। কাঁচাবাজার, মাছ-মাংসের বাজারে হয়তো বাধ্য হয়ে মানুষ যাচ্ছে। কিন্তু অন্য কোনো দোকানে তেমন লোক আসছে না। আবহাওয়া ভালো হলে বিক্রি বাড়বে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

মূলত বঙ্গোপসাগরে বিদ্যমান লঘুচাপ ও বরিশাল বিভাগের ওপর সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর কারণে টানা পঞ্চমদিন সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম জানিয়েছেন, বিভাগের সবগেুলা নদীর পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধ, বৃহস্পতি, শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিপৎসীমা অতিক্রম করে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এটি বন্যা পরিস্থিতি না উল্লেখ করে জানান, বর্ষা মৌসুমে এই চিত্র স্বাভাবিক। তবে বেশিদিন পানি বৃদ্ধি থাকলে নদী ভাঙন দেখা দেবে।

তিনি বলেন, বরিশাল জেলার কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ভোলা খেয়াঘাট এলাকার তেঁতুলিয়া নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দৌলতখান উপজেলার সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, তজুমদ্দিন উপজেলার সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি ১ মিটার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ঝালকাঠি জেলার বিশখালী নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার বুড়িশ্বর/পায়রা নদীর পানি ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, বরগুনা জেলার বিশখালী নদীর পানি ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পাথরঘাটা উপজেলার বিশখালী নদীর পানি ১ মিটার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদীর পানি ২৭ সেন্টিমিটার এবং উমেদপুরের কঁচা নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র উচ্চ পর্যবেক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বিগত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ৭৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সংকেত ও নদী বন্দরগুলোতে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আগামী দুইদিন এমন আবহাওয়া থাকবে। এই সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। তবে বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলীয় জেলা ভোলার মনপুরা, তজুমদ্দিন, দৌলতখান উপজেলায় শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। একইচিত্র পটুয়াখালীর কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, মির্জাগঞ্জ, বাউফল উপজেলায়। বরগুনার পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগীতেও শতাধিক গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস