অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে চা শ্রমিকরা
দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আজ থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন চা শ্রমিকরা। শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে তারা কর্মবিরতি শুরু করেন। বিকেলের মধ্যে মালিক পক্ষের আশ্বাস না পেলে কঠোর আন্দোলনে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
চা বাগানের নারী শ্রমিক উমা হাজরা বলেন, আমরা ১২০ টাকা মজুরি পাই। এ দিয়ে আমাদের চলে না। আমরা অনেক কষ্ট করে জীবন কাটাই। ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করতে পারি না, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারি না। সব কিছুর দাম বাড়ে কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ে না। আমরা কোনো রকম জীবন কাটাচ্ছি। চায়ের দাম ও উৎপাদন বাড়ে, আমাদের মজুরি কেন বাড়বে না। আমরা যদি বেঁচে না থাকি, তাহলে চা বাগানে ধস নামবে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, চা শ্রমিকদের এক দিনের মজুরি দিয়ে ১ লিটার পেট্রোলও কেনা সম্ভব না। শ্রমিকরা কি নিদারুণ কষ্টে রয়েছেন তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কিছু হয় না।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল বলেন, আমরা গত ১৯ মাস ধরে কত আন্দোলন, সংগ্রাম করছি। কিন্তু মালিক পক্ষের টালবাহানা কমছে না। বর্তমান সময়ে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমাদের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। আমরা বার বার বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছি। কিন্তু তারা টালবাহানা করে মজুরি বৃদ্ধি করছেন না। এতে করে শ্রমিকরা ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন।
তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের হাজিরা ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বৃদ্ধি করার দাবি অনেক দিনের। মালিক পক্ষ ইতোমধ্যে ১৪ টাকা বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১৪ টাকা বৃদ্ধি হলে একজন শ্রমিকের মজুরি হবে ১৩৪ টাকা। এই ১৩৪ টাকা দিয়ে কীভাবে একজন শ্রমিকের জীবন চলবে? সারা দিন পরিশ্রম করে এক লিটার পেট্রোলের দামও হবে না।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় বলেন, বর্তমান সময়ে ১২০ টাকা মজুরিতে চলা মুশকিল। শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা করার এই যৌক্তিক দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত। আমরা চা শিল্পের ক্ষতি চাই না। আমরা চাই চা শিল্প বেঁচে থাকুক। চা শিল্প বেঁচে থাকলে শ্রমিকরাও বাঁচবে। তাই চা শিল্প টিকিয়ে রাখতে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করে আগে তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
ওমর ফারুক নাঈম/এসপি