নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল রয়েছে বঙ্গোপসাগর। গত সোমবার (৮ আগস্ট) থেকে উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সাগর ও নদ-নদীর পানির উচ্চতা ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। সাগরের বড় বড় ঢেউ তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। বৃষ্টি ও বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যাওয়ায় গভীর সমুদ্রে জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রেখে ফিরে এসেছেন তীরে। উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের তাণ্ডবের কারণে জাল গুছিয়ে শতশত মাছ ধরা ট্রলার নিয়ে জেলেরা আলীপুর-মহিপুর মৎস্য বন্দরে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে গত সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পায়রা বন্দরের শেষ ফেয়ার বয়া এলাকায় এফবি আনোয়ার ও এফবি সুজন নামে দুটি মাছধরা ট্রলার ডুবে যায়। এ সময় দুই ট্রলার থেকে সিরাজুল ইসলাম (৫০) ও সিদ্দিক প্যাদা (৫৫) নামে দুই জেলে নিখোঁজ হন। এরপর দিন মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ১৫ জেলেসহ এফবি নিশাত নামে একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। এ সময় ৯ জেলে মো. ফরহাদ, সোহেল, ইয়াসিন, ইয়াকুব, আলকাছ, আমজাদ, শরীফ উদ্দিন, শরীফ ও জাফর নিখোঁজ হন। পৃথক ঘটনায় আরও সাত জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। তিন দিন অতিবাহিত হলেও নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাদের কী পরিনতি হয়েছে তা বলতে পারেছেন না কেউ।

এ বিষয়ে মহিপুর মৎস্য আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদন রাজু আহম্মে রাজা মিয়া বলেন, নিখোঁজ জেলেদের এখনো কোনো সন্ধান পাওয়ার খবর আমরা পাইনি।

এদিকে পায়রা বন্দরকে স্থানীয় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। এছাড়া মাছ ধরার ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে চলাচল করতে বলা হয়েছে। গত তিন ধরে উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতে ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আরও তিন দিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এই সময়ে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া ও বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

স্থানীয় জেলেরা জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার শত শত ট্রলার নিয়ে জেলেরা সাগরের বুকে রুপালি ইলিশ পাওয়ার আশায় জাল ফেলে ছিলেন। কিন্তু সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠায় তারা জাল গুছিয়ে নিরাপদ আশ্রয় ফিরে এসেছেন। মাছ না ধরতে পেরে এখন জেলেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

জেলে আলমগীর হোসেন বলেন, কেবল জালে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছিল। এ অবস্থায় আবহাওয়া খারাপ হয়ে গেছে। তাই ফিরে এসেছি। 

আরেক জেলে রুহুল মাঝি জানান, তাদের ট্রলারের ১৭ জন জেলে ছিল। ৪০ কিলোমিটার গভীরে মাছ ধরা অবস্থায় সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। তারা সমুদ্রে টিকতে না পেরে জাল গুছিয়ে নিরাপদে তীরে ফিরে এসেছেন।

কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য আড়ৎদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা তীরে ফিরে এসে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে সমুদ্র প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে।

এ বিষয়ে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার আবুল খায়ের বলেন, ট্রলারডুবির ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। বিষয়টি কোস্টগার্ডকে অবহিত করা হয়েছে। নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে সাগর উত্তাল থাকায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে. কমান্ডার সৈয়দ তৈমুর পাশা বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় ৮ আগস্ট থেকে ভোলা, কক্সবাজার, পটুয়াখালী জেলার ছয়টি মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। এতে ১৯ জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।

কাজী সাঈদ/আরএআর