২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি জাহানারা খাতুনের (৮৩) স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। দাফন করা হয় নিজ গ্রাম চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জামজামি ইউনিয়নের চরপাড়া কবরস্থানে। এর মধ্যে পার হয়ে যায় তিনটি মৃত্যুবার্ষিকীও।

শনিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পুলিশ সদস্যের ফেসবুক পোস্ট দেখে অস্বস্তিতে পড়েন মৃত জাহানারার পরিবারের সদস্যরা। এতে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা।

জানা যায়, শনিবার (৬ আগস্ট) দুপুর ২টা ২৬ মিনিটে Amader Alamdanga (আমাদের আলমডাঙ্গা) গ্রুপে 
পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সজিব তার ‘SI Sajib’ নামে ফেসবুক আইডি থেকে এক বৃদ্ধার ছবিসহ তার ভোটার আইডি কার্ড, ছবিসহ পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন : 

‘একটি মানবিক আবেদন
নিহত এই নারীর নাম মোসাম্মৎ জাহানারা খাতুন, পিতার নাম আহম্মদ হোসেন মিয়া, স্বামীর নাম আবুল হোসেন মিয়া, মাতার নাম খোদেজা খাতুন। গ্রাম- আলমডাঙ্গা পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড। তিনি গত ০৬/০৭/২০২২ খ্রিস্টাব্দে রাত্র ০৩.০০ ঘটিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তার লাশ বর্তমানে রাজবাড়ী জেনারেল হাসপাতালে আছে। যদি কেউ উক্ত মৃত নারীর ঠিকানা জানেন বা তাকে চিনেন, তাহলে দয়া করে ০১৩২০১৮৪২৮২ ওসি আহলাদীপুর হাইওয়ে থানায় যোগাযোগ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এই পোস্ট করার কিছুক্ষণ পরে ‘অন্তরা শোয়াইব’ নামে একজন লেখেন, ‘আপনি যার ছবি দিয়েছেন, তিনি সম্পর্কে আমার নানি ছিলেন। তিনি তিন বছর আগে মারা গেছেন। তিন বছর আগে যিনি মারা গেছেন, গত রাত ৩টার সময় তিনি আবার কীভাবে মরতে পারে ভাই! আপনার উচিত ছিল ফেসবুকে ছবি আপলোড দেওয়ার আগে মৃত ব্যক্তির সঠিক পরিচয় জানা। আর যার ছবি দিয়েছেন, তার সম্পর্কে জানা। আপনি একজন পুলিশ হয়ে এই ভুল করলেন। না জানি সাধারণ পাবলিক হলে কী করতেন!’

এ ছাড়া আবু সুইট নামে এক যুবক তার নানি দাবি করে বৃদ্ধা নারীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লেখেন, আমার নানি মারা গেছেন ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি।

শনিবার (৬ আগস্ট) রাতের কোনো এক সময় রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ চেয়ারম্যানের অফিসের সামনে দ্রুতগামী কোনো যানবহনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধা নিহত হন। সকালে ফরিদপুর থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শানাক্ত করে।

সেই শনাক্ত করা ঠিকানায় পরিচয় আসে, তার নাম মোছা. জাহানারা খাতুন। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড কলেজপাড়ার আহাম্মদ আলী মিয়ার মেয়ে তিনি। তার মায়ের নাম খোদেজা খাতুন এবং স্বামীর নাম আবুল হোসেন মিয়া।

এ নিয়ে রাজবাড়ী জেলার আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুরে চুয়াডাঙ্গা থেকে নাঈম নামে এক ব্যক্তি আমাকে জানান, এই নারী তিন বছর আগেই মারা গেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরাও হতভম্ব হয়েছি। তাহলে অজ্ঞাতনামা মৃত নারীটি কে? আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি বলে জানান তিনি।

এদিকে মৃত জাহানারা খাতুনের নাতি অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আবু সাঈদ প্রিন্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেসবুকে পোস্ট দেখেছি। ঠিকানা ও ছবির সঙ্গে আমার নানির সবকিছু মিলে গেছে। আমার নানি মারা গেছেন ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। বিষয়টি নিয়ে আমি ও আমাদের স্বজনরা বিব্রত হচ্ছি। স্বজনরা ও পরিচিতরা ফোন করে বিষয়টি জানতে চাইছেন। হয়তো ভোটার কার্ড করার সময় ভুলবশত আমার নানির পরিবর্তে অন্য কেউ আঙুলের ছাপ দিতে পারে। এ জন্য এমনটি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পোস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া নারীর ছবিও দেখেছি। ওই ছবিটির আমার নানির ছবির সঙ্গে কোনো মিল নেই। ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি আমার নানি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। চরপাড়া গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে ফরিদপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপপরিদর্শক (এসআই) আবেদিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে সকালে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিহত বৃদ্ধার আঙুলের ছাপের মাধ্যমে জাহানারা খাতুন বলে নিশ্চিত হই আমরা। এটা আমাদের নিজস্ব কোনো সফটওয়্যার না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে শনাক্ত করা হয়েছে। সেই কপি ও ছবি আমরা আলমডাঙ্গা থানায় জমা দিয়েছি।

আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে, বিষয়টি আমি জেনেছি। শনিবার মধ্যরাতে রাজবাড়ী জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত নারীর নিহত হয়েছে। পরিচয় শনাক্তের পর আলমডাঙ্গায় তিন বছর আগে মারা যাওয়া এক নারীর নাম উঠে আসে। আমরা ধারণা করছি, ভোটার আইডি কার্ড করার সময় ফিঙ্গারপ্রিন্টের কোনো ঝামেলা থাকতে পারে।

আফজালুল হক/এনএ