কুমিল্লায় শিক্ষকের বেত্রাঘাতে মাদরাসাছাত্রের মৃত্যুর নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। শুক্রবার (০৫ আগস্ট) রাতে নিহত মাদরাসাছাত্র সিহাবের মা খালেদা বেগম সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদরাসা থেকে ফোন করে বলা হয় সিহাব অসুস্থ। পরে সিহাবের বাবা বিকেলে মাদরাসায় গিয়ে সিহাবকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে আনার পর তার শরীরে জ্বর দেখে স্থানীয় শশইয়া বাজারের এক ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে আনে ওর বাবা। রাতের খাবার খাওয়ার পর ওকে ওষুধ খাওয়ার জন্য বললে জেদ ধরে সিহাব। সে ওষুধ খাবে না বলে। আমাকে প্রশ্ন করে, আমার কেন এমন হয়েছে আপনারা জানতে চেয়েছেন? বলেই জামা খুলে পিঠ দেখায় সিহাব। 

এ সময় সিহাব বলে, ৩-৪ দিন আগে ভাত খাওয়ার সময় হাত থেকে প্লেট পড়ে গিয়েছিল। সেই অপরাধে মাদরাসার শিক্ষক তাকে জোড়া বেত দিয়ে অন্তত ২০০ বার আঘাত করেন। সেই আঘাতের দাগগুলো পিঠে স্পষ্ট, সেগুলো কালো আকার ধারণ করেছে। পরে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ানো হয়। 

শুক্রবার সকালে সিহাবের জ্বর অনেক বেড়ে যায়। একইসঙ্গে কয়েক দফা বমি করে। এ সময় ওর চাচা মামুন হোসেন বরুড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। পরে সিহাবকে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তার পরিস্থিতি দেখে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। 

সেখানে তাকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে তার অবস্থা খারাপ দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। পরে ওর চাচার অনুরোধে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ লিখে দেন। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনার পর চিকিৎসক তার শরীরে ইনজেকশন দেওয়ার মিনিট তিনেক পর মারা যায় সিহাব

এদিকে সিহাবের মৃত্যুর পর তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যায় স্বজনরা। জানাজার প্রস্তুতি নেওয়া হলে, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের হস্তক্ষেপে জানাজা বন্ধ রেখে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহত সিহাবের শরীরে বেত্রাঘাতের চিহ্ন ছিল। আমরা তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। রিপোর্ট আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমাদের তদন্তের কাজ থেমে নেই। আমরা অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। সিহাবের পরিবার এখনো লিখিত অভিযোগ দেননি। দিলে মামলা রুজু হবে। 

সিহাবের বাবা শুকুর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা গ্রামের সহজ সরল মানুষ। মামলা মোকদ্দমার বিষয়গুলো কম বুঝি। কী করব বুঝতে পারছি না। কেউ বলছে মামলা করো, কেউ বলছে করো না। ঠিক কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। 

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (০৫ আগস্ট) দুপুর ১টা ১২ মিনিটে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় মো. সিহাব নামে এক মাদরাসাছাত্র। তার পরিবারের অভিযোগ, ৩-৪ দিন আগে শিক্ষক আব্দুল ওহাব তাকে বেত্রাঘাত করেন। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ে সিহাব। মাদরাসার শিক্ষকরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও সে সুস্থ না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সিহাবের পরিবারে ফোন করে তার অসুস্থতার খবর জানায়। পরে বিকেলে গিয়ে সিহাবের বাবা শুকুর আলী মাদরাসায় গিয়ে তাকে নিয়ে আসে। পরের দিন দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সিহাবের।

সিহাব বরুড়া উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের শশইয়া গ্রামের ডিলার বাড়ির শুকুর আলী ডিলারের ছেলে। সে একই ইউনিয়নের মেড্ডা আল মাতিনিয়া নূরানী মাদরাসার ছাত্র ছিল। ওই মাদরাসার শিক্ষক আব্দুর রব তত্ত্বাবধানে নূরানী শিক্ষা গ্রহণ করছিল সে। 

এসপি