ডিজেল ও কেরোসিনসহ পেট্রোল-অকটেনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির খবর পাওয়ার পর থেকে সারা দেশে তেলের জন্য হাহাকার দেখা দেয়। জ্বালানির দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর থেকেই ফিলিং স্টেশনে ভিড় করতে থাকে মানুষ।

অন্যদিকে বাড়তি দাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ কারণে কোথাও বিক্ষোভ, কোথাও বাগবিতণ্ডায় জড়ান গ্রাহকরা। 

দেশের বিভিন্ন এলাকার খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা—

সুনামগঞ্জ: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর পর সুনামগঞ্জে বন্ধ করে দেওয়া হয় সব পেট্রোল পাম্প। শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে কোনো পেট্রোল পাম্পে তেল দেওয়া হয়নি। পেট্রোল পাম্পে তালা মেরে চলে চান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে পেট্রোল পাম্পের সামনে ভিড় জমান মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার চালকরা। এসময় পাম্প বন্ধ রাখায় বিক্ষোভ করা হয়। 

সাতক্ষীরা: তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর ভিড় লাগে সাতক্ষীরার পেট্রোল পাম্পগুলোতে। শুক্রবার রাত ১১টার পর থেকে উপচে পড়া ভিড় ছিল পাম্পগুলোতে। রাত সাড়ে ১১টায় জেলার তালার মেসার্স মিলেনিয়াম ইউরেকা ফিলিং স্টেশনে দেখা যায়, কমপক্ষে ২০০-২৫০ মোটরসাইকেল চালক পাম্পে তেল নেওয়ার জন্য ভিড় করেছেন। তবে পাম্প কর্তৃপক্ষ ২০০ টাকার বেশি কাউকে তেল দেয়নি।

খুলনা: তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পাম্পগুলোতে ভিড় জমাতে শুরু করেন চালকরা। তেল নিতে পাম্পে আসা ট্রাক চালক রুবেল বলেন, শুনেছি তেলের দাম বেড়েছে, তাই পাম্পে চলে এসেছি। এসে দেখি অনেক ভিড়, নির্ধারিত সময়ে তেল পাব কি না জানি না।

বাগেরহাট: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির খবরে বাগেরহাটের পেট্টোল পাম্পে ভিড় করে অসংখ্য গাড়ি-মোটরসাইকেল। ভিড় সামলাতে খানজাহান আলী পেট্রোল পাম্পে মোটরসাইকেল প্রতি ১০০ টাকার তেল দেওয়া হয়। অপরদিকে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পেট্রোল পাম্প কিছুক্ষণ ২০০ টাকার তেল দিলেও পরে তেল দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

নীলফামারী: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির খবর পাওয়ার পর থেকে নীলফামারী জেলা শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় পেট্রোল পাম্প বন্ধ করে রাখে কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলতে রাজি হননি। অন্যদিকে বাইক চালকরা তেল নিতে ভিড় করেছেন ফিলিং স্টেশনগুলোতে। জেলা শহরের মেসার্স দেওয়ান ফিলিং স্টেশন, মেসার্স রাজা ফিলিংস স্টেশন, মেসার্স ভাই ভাই ফিলিং স্টেশন, মেসার্স মুক্তা ফিলিং স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এছাড়াও জেলার শহরের বাইরের ফিলিং স্টেশনগুলাও বন্ধের খবর পাওয়া গেছে।

বরগুনা: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবর শুনে বরগুনার একমাত্র এস অ্যান্ড বি ফিলিং স্টেশনে জ্বালানি তেল কিনতে এসেছেন হাজার হাজার মোটরসাইকেল চালক। শুক্রবার রাত ১১টা থেকে পাম্পে ভিড় করতে থাকেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, হঠাৎ এমন দাম বৃদ্ধির খবরে রাত ১২টার আগেই জ্বালানি তেল কম দামে কিনতে এসেছেন তারা। ক্রেতাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষকে।

কক্সবাজার: দাম বাড়ানোর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কক্সবাজারে পেট্রোল পাম্পে তেল না পেয়ে বিক্ষোভ করেন বাইকাররা। শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে শহরের টার্মিনাল পেট্রল পাম্পসহ বেশকিছু পাম্পে তেল কিনতে গিয়ে না পেয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ক্রেতারা। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করেন।

রংপুর: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে রংপুরের পাম্পগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে রাত ১০টার মধ্যে রংপুর নগরীর বেশিরভাগ ব্যবসায়ী পাম্প বন্ধ করে সটকে পড়েন। রাত ১২টার পর সরকারের বেঁধে দেওয়া নতুন দামে বেশি লাভে তেল বিক্রি করতেই জ্বালানি তেলের ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই পাম্পগুলো বন্ধ করেছেন বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। তেল না পেয়ে বিক্ষুব্ধ মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা শহরের শাপলা পাম্প সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

কুমিল্লা: অকটেন, করোসিন, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর থেকে কুমিল্লা নগরীর পেট্রোল পাম্পগুলোতে তেল কেনার জন্য মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের তেলে নির্ভর যানবাহনগুলোর ভিড় বাড়ে। নগরীর পাম্পগুলোর কোনোটিতে রাতে তেল বিক্রি করা হয় আবার কোনো কোনোটিতে ১১টার দিকে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কয়েকটি পাম্পও বন্ধ করে রাখা হয়।

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ শহরে বৃদ্ধির ঘোষণার পরপরই পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল বিক্রি বন্ধ করে দেয় পাম্পগুলো। বিদ্যুৎ নেই, জেনারেটর বন্ধ, লোক নেই বলে শুক্রবার রাত ১০টার পর থেকে হবিগঞ্জ শহরের একমাত্র পেট্রোল পাম্প এম হাই অ্যান্ড কোং। এসময় শত-শত মোটর সাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহনকে তেল নিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

সাভার (ঢাকা): জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির খবরে সাভারে তেলের পাম্পে মোটরসাইকেল চালকদের সঙ্গে বাগকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত ১১টা থেকে সাভারের বিভিন্ন পাম্পে শত শত মোটরসাইকেল ভিড় করতে থাকে। তবে মূল্যবৃদ্ধির খবর পেয়ে আগেই অনেক পাম্প বন্ধ রাখেন মালিকরা। এ নিয়ে মোটরসাইকেল চালকদের অনেকে বাগকবিতণ্ডায় জড়ান।

শেরপুর: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে শেরপুরে পেট্রোল পাম্পগুলোতে ভিড় জমায় গাড়িচালকরা। বিশেষ করে পাম্পগুলোতে মোটরসাইকেল চালকদের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তেল না দেওয়ার অভিযোগ তোলেন গাড়িচালকরা। দুএকটি পাম্পে তেল দিলেও কম পরিমাণে দেওয়া হয়। এতে দূরপাল্লার গাড়িগুলো সমস্যায় পড়ে। ট্রাকসহ পণ্য পরিবহনের গাড়িগুলো তেল না পেয়ে মালামাল পরিবহন করতে পারছে না। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চালক ও মালিকরা।

পঞ্চগড়: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তেল নিতে পঞ্চগড়ে ফিলিং স্টেশনগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও আগের দামে তেল না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। এ নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ময়মনসিংহ: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো ময়মনসিংহের সব ফিলিং স্টেশনেও মোটরসাইকেল চালকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। হাতেগোনা কয়েকটি ফিলিং স্টেশনে জ্বালানি তেল দেওয়া হলেও অধিকাংশই বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে। আর যেগুলোতে দেওয়া হয়েছে সেগুলোতেও বিক্রি ছিল অত্যন্ত ধীরগতির। 

এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মোটরসাইকেল চালকরা। অনেকেই জানিয়েছেন, বাইকে অকটেন নিতে গেলেও ২০০ টাকার বেশি অকটেন দেওয়া হয়নি। এদিকে প্রায় দুই ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করেও তেল না নিয়েই ফেরত যেতে হয়েছে অসংখ্য চালককে। যদিও পাম্প কর্তৃপক্ষ জানায়, হঠাৎ করেই মোটরসাইকেল আরোহীদের চাপ অনেক বেড়ে যাগেছে। এজন্য তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল।

এসএসএইচ