কুষ্টিয়া-নারায়ণগঞ্জ রুটে ঈগল পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ
টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে জিম্মি করে গণডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় কুষ্টিয়া-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ঈগল পরিবহন বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বাসের চালক, সুপারভাইজার ও হেলপার জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
পুলিশ, ভুক্তভোগীদের স্বজন ও ঈগল পরিবহন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (০২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা প্রাগপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেয়। বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বিরতি দেয়। রাত দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহনকারী ১০-১২ জন যাত্রী বাসে ওঠেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রী বেশে থাকা ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে বাসটির নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মারধর, ডাকাতি ও ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (০৪ আগস্ট) ভোর ৫টার দিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা থেকে রাজা মিয়া (৩২) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাজা কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।
ঈগল পরিবহনের কুষ্টিয়ার লাইনম্যান পলাশ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রাগপুর থেকে বাসটি নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে কুষ্টিয়ার হোসেনাবাদ, ডাংমড়কা, আল্লাহরদর্গা, রাজাপুর, কাচিকাটাসহ বিভিন্ন কাউন্টার থেকে প্রায় ২৮ জন যাত্রী ওঠেন। তার মধ্যে তিন-চারজন যাত্রী সুপারভাইজার রাব্বির ছিল। বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনার পর কুষ্টিয়া-নারায়ণগঞ্জ রুটে ঈগল পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের বুধবার সকালের দিক থেকে টিকিট বিক্রি করতে নিষেধ করে দিয়েছেন।
ওই বাসের চালকের নাম মনি আহমেদ ও হেলপার দুলাল। প্রায় ২০ দিন আগে মনি বাসের চালক হিসেবে যুক্ত হন।
ওই বাসের যাত্রীরা জানায়, বুধবার গভীর রাতে সিরাজগঞ্জ পৌঁছালে সেখান থেকে কয়েকজন ডাকাত যাত্রীবেশে ওই বাসে ওঠেন। এরপর বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর ডাকাতদল বাসটি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বাসে থাকা সব যাত্রীর হাত, পা ও চোখ বেঁধে মারধর ও লুটপাট করে। এ সময় বাসের ভেতরে এক নারী যাত্রীকে ডাকাত পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বাসের সুপারভাইজার ও ড্রাইভারের বোকামির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। তারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতেও পারে।
তারা আরও বলেন, বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে। বাসটি পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর ঢিবিতে উল্টে দিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ঈগল পরিবহনের যে বাসটি ডাকাতরা জিম্মি করেছিল, সেই বাসের চালককে সরিয়ে দিয়ে রাজা চালকের সিট দখল করে। তারা ১০ জন মিলে ওই বাস জিম্মি করে চলন্ত অবস্থায় যাত্রীদের কাছ থেকে সব কিছু ডাকাতি করেছে। এছাড়া বাসে থাকা এক নারীকে তার সহযোগীরা ধর্ষণ করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে সব কিছু স্বীকার করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রাজু আহমেদ/এসপি