ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম (৩০) নামে এক সাংবাদিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারের ভাই জাপান ও তার অনুসারীরা।

সোমবার (১ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদর বাসস্ট্যান্ডের ‘রাজধানী পরিবহনের’ কাউন্টারে এ ঘটনা ঘটে। পরে এলাকাবাসী মুজাহিদকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।

আহত মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর হোসাইনের ছেলে। তিনি ঢাকা টাইমস পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক। 

আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, সাংবাদিক মুজাহিদকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে শারীরিক অবস্থা গুরুতর মনে করে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত জাপান আলফাডাঙ্গার পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সাইফারের মেজো ভাই। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানায়, ঢাকা যাবেন বলে আলফাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের রাজধানী পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট কিনে বাসে ওঠেন মুজাহিদের বন্ধু গোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মৃত মোসলেম খানের ছেলে মো. রমিজ  খান (২৯)। তিনি ঢাকায় একটি বায়িং হাউসে চাকরি  করেন।  বাস ছাড়ার আগ মুহূর্তে রাজধানী পরিবহনের ‘ক্যাশ কাউন্টার’ থেকে বলা হয় রমিজ টিকিটের টাকা দেননি। তাই তাকে ঢাকায় যেতে দেওয়া হবে না। তখন রমিজ বিষয়টি মুজাহিদকে জানিয়ে এ ব্যাপারে তার সহযোগিতা চান।

মুজাহিদ ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি জানার চেষ্টা করলে কাউন্টারের ম্যানেজার পৌর মেয়রের ভাই জাপান ও তার সহযোগীদের সঙ্গে মুজাহিদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জাপান ও তার সহযোগীরা কাঠের বাটাম দিয়ে মুজাহিদকে বেধড়ক পেটালে গুরুতর আহত হন তিনি। 

রাজধানী পরিবহনের ওই কাউন্টারটি পরিচালনা করেন পৌর মেয়র সাইফারের ছোট ভাই ওসমান। এ কাজে ভাইকে সহযোগিতা করেন মেজো ভাই জাপান।

সাংবাদিক মুজাহিদ জানান, জাপান ও তার পাঁচ-ছয়জন সহযোগী হঠাৎ করে তার ওপর হামলা চালায়। লোহার রড, স্টাম্প দিয়ে তাকে বেধরক পেটায় জাপান ও তার সহযোগীরা। এতে তার মাথা, হাত ও পিঠে জখম হয়।

এ ব্যাপারে পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার ঢাকা পোস্টকে জানান, দোষীদের সঙ্গে কোনো আপস নেই। জাপান দোষী হলে তিনি নিজে জাপানকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে পুলিশের তদন্তের কাজে সহযোগিতা করবেন। ভাই বলে ছাড় দেবেন না।

ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর বলেন, ঘটনা জানার পরপরই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতোমধ্যেই একজনকে আটক করা হয়েছে। মুজাহিদকে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জাপানকে আটকের জন্য পুলিশের  তিনটি দল কাজ করছে। সাংবাদিক নির্যাতনের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিকে এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে জরুরি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম।

উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবীর বলেন, এ ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। জাপানসহ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। সাংবাদিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন।

জহির হোসেন/আরএআর