বজ্রপাতে সাত কৃষকসহ ১০ জনের মৃত্যু
দেশের ৮ জেলায় বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী ও জয়পুরহাটে দুজন করে মারা গেছেন। চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া, নেত্রকোণা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও লালমনিরহাটে মারা গেছেন একজন করে।
শনিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে-
বিজ্ঞাপন
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, নীলফামারী সদরে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে কচুকাটা ও চাঁদেরহাট এলাকায় পৃথক এ দুটি ঘটনা ঘটে। এ সময় আরও দুই কৃষক আহত হয়েছে। তাদের নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, কচুকাটা ইউনিয়নের মাঝাপাড়া গ্রামের মোখছেদুল ইসলাম (৫৫) ও রামনগর ইউনিয়নের চাঁদেরহাট আর্দশপাড়া গ্রামের রেদোয়ানুল হক(২২)। তারা দুজনই পেশায় কৃষক। জমিতে হাল দেওয়ার সময় পাওয়ার ট্রলির দুই চালক আলম ও রশিদ আহত হয়।
স্থানীয়রা জানায়, দুপুরে দিকে বৃষ্টি হচ্ছিল। পৃথক স্থানে তারা বৃষ্টিতে ভিজে জমিতে আমন চারা রোপনের জন্য জমিতে হাল ও সেচের জন্য নালা তৈরি করছিলেন। বৃষ্টির মধ্যেই সেখানে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই কৃষকের মৃত্যু হয়।
নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউপ ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় লাশ দুটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলমান।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, দামুড়হুদা উপজেলায় বজ্রপাতে আলামিন হোসেন (২২) নামে এক কৃষকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
দুপুরে মাঠে কৃষি কাজের সময় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আলামিন হোসেন উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের বুইচিতলা গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে।
পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, দুপুরে গ্রামের একটি কৃষি জমিতে বৃষ্টি-বজ্রপাতের মধ্যে কাজ করছিলেন আলামিন। এসময় আলামিনের মাথায় বজ্রপাত ঘটলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে মাঠের অন্য কৃষকরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দর্শনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষি কাজের সময় বজ্রপাতে আলামিন নামে একজন নিহত হয়েছেন। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে মরদেহের দাফনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, শেরপুর উপজেলায় বজ্রপাতে ফিজার হোসেন (৩৬) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের ঘোরদৌড় গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষক ফিজার হোসেন উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের নলবাড়িয়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বিকেলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এরইমধ্যে মাঠে আমন ধান লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত করার কাজ করছিলেন তিনি। এসময় বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়। এতে কৃষক ফিজার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার শরীরের কিছু অংশ পুড়ে যায়। পরবর্তীতে এলাকার লোকজন এসে ওই কৃষককে দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। এ সময় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খামারকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মোমিন মহসিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মধ্যেই মাঠে কাজ করছিলেন কৃষক ফিজার। এক পর্যায়ে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
শেরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আশরাফ হোসেন জানান, বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদ পেয়েছি।
নেত্রকোণা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোণায় বজ্রপাতে দুলাল মিয়া (৬৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বিকেলে বারহাট্টা উপজেলার আসমা ইউনিয়নের আসমা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি আসমা গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে।
সন্ধ্যায় বারহাট্টা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল ৩টার দিকে দুলাল মিয়া নিজেদের গোয়ালঘরে কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে কৃষক দুলাল মিয়া ও তার পালিত গরুটি আহত হয়। গরুটি তাৎক্ষণিক গোয়ালঘরেই মারা যায়। এ অবস্থায় বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা আহত দুলাল মিয়াকে দ্রুত বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্য চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে সাদ নামে এক কিশোর নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার রাজারামপুর হাসিনা গার্লস স্কুল মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত সাদ রাজরামপুরের মৌলভী পাড়া মহল্লার সেরাজুল ইসলামের ছেলে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাঠে ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে মৃত্যু হয় কিশোর সাদের। পরে স্থানীয়রা ওই কিশোরকে মাঠ থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। স্থানীয়রা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, তাড়াশে ওষুধ কিনে ফেরার পথে বজ্রপাতে জামিলা খাতুন (৬০) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে উপজেলার তালম ইউনিয়নের হাড়িসোনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জামিলা খাতুন একই গ্রামের খাজেম আলীর স্ত্রী।
বিষটি নিশ্চিত করে ১নং তালম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক বলেন, জমিলা খাতুন দুপুরে পাশেই গ্রাম্য ডাক্তারের বাড়ি থেকে ওষুধ নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় বজ্রপাত ঘটলে তিনি রাস্তার মধ্যেই মারা যান।
তাড়াশ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নূরে আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে আমি নিজে একটি টিমসহ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, কালীগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুই মহিষসহ মোজা মিয়া (৫২) নামে এক রাখালের মৃত্যু হয়েছে।
বিকেলে উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৌলমারী গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গৃহপালিত মহিষ নিয়ে বাড়ির পাশে খোলা মাঠে চড়াতে যান রাখাল মোজা মিয়া। বিকেলে আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেলেও মাঠেই ছিলেন তিনি। হঠাৎ বজ্রপাত আঘাত হানলে ঘটনাস্থলেই তিনিসহ তার দুই মহিষের মৃত্যু হয়েছে। পরে বিষয়টি বুঝতে পেয়ে স্থানীয়রা মোজা মিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রসুল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, আক্কেলপুর ও পাঁচবিবিতে বজ্রপাতে এক কৃষকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। দুপুরে আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইসমাইলপুর নয়াপাড়া গ্রামে ও সন্ধ্যায় পাঁচবিবির বাগজানা ইউনিয়নের চকশ্যামসের গ্রামে দুটি ঘটনা ঘটে।
নিহত কৃষক হলেন আনোয়ার হোসেন (৪২)। তিনি ইসমাইলপুর নয়াপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে এবং পাওয়ার ট্রিলারচালক রবিউল ইসলাম (২২)। তিনি পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের চকশ্যামসের গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে।
গ্রামবাসীরা জানান, দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে আনোয়ার হোসেন গ্রামের মাঠে তার জমির আইল কোপাতে যান। এসময় বজ্রপাত হলে আনোয়ার জমির আইলের ওপর পড়ে যান। বৃষ্টির পর বাহিরে এসে দেখা যায় জমির আইলের ওপর আনোয়ার হোসেন পড়ে আছেন। তার বুক ঝলসানো ও কান দিয়ে রক্ত ঝরছিল।
ওই গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি সময় বজ্রপাতে আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়। তার জমির আইলের ওপর থেকে উদ্ধার করেছি।
আক্কেলপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, জমির আইল কোপাতে মাঠে গিয়ে বজ্রপাতে কৃষক আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন। তার লাশ পরিবার নিয়ে গেছেন।
অন্যদিকে আজ সন্ধ্যায় পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের চকশ্যামসের গ্রামের মাঠে পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে কৃষকের জমি চাষ করছিলেন রবিউল ইসলাম। এ সময় বৃষ্টি শুরু হয় এবং বজ্রপাতে তার মৃত্যু ঘটে।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ চন্দ্র দেব ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এমএএস