হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা
মালিক-শ্রমিকের মতানৈক্যের জন্য ১৬ দিন ধরে হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ পথে চলাচলকারী মানুষ। তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিএনজি ও বিদ্যুৎচালিত অটোরিকশার জন্য বাসের যাত্রী একেবারে কমে গেছে। যে কারণে আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে বাস মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের মতানৈক্য শুরু হয়। এ জন্য গত ১৪ জুলাই থেকে কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়েই গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন বাস শ্রমিকরা। কয়েক দফা বৈঠকের পরও বিষয়টির সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন মালিক-শ্রমিক নেতারা। আর মালিক-শ্রমিকের এই টানাপোড়েনের জন্য ১৬ দিন ধরে হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তবে বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতির নেতারা বলছেন, তাদের মধ্যে সমন্বয় ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এই সুযোগে অটোরিকশাগুলোও নানা অজুহাতে ভাড়া বেশি আদায় করছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষরা যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
ওই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় গত ১৫ দিন থেকে যাত্রীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে অটোরিকশাযোগে চলাচল করছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জজ কোর্ট ও বিভিন্ন অফিস-আদালতে আসতে নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগে পড়ছে বেশি। আর বাস বন্ধ হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা-বসচা লেগেই আছে। হবিগঞ্জ শহরের কিবরিয়া ব্রিজ পয়েন্ট থেকে অটোরিকশার ভাড়া ছিল ৫০ টাকা ও ইমামবাড়ি নামক স্থানটির ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৭০ ও ৫০ টাকা। এমনকি স্থানভেদে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) আশরাফ আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, কয়েক দিন আগেও হবিগঞ্জ থেকে নবীগঞ্জের ভাড়া ছিল ৫০ টাকা। কিন্তু এখন সিএনজি অটোরিকশার সংকটসহ নানা অজুহাতে ভাড়া দিতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এ ছাড়া অটোরিকশার ভাড়াও নিয়ন্ত্রণহীন। বিকল্প কোনো মাধ্যম না থাকায় বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে বেশি ভাড়া দিয়ে।
হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক বাস শ্রমিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ অভিযোগ করে জানান, অটোরিকশার জন্য তারা ঠিকমতো গাড়ি যেমন চালাতে পারছেন না। আয়ের পরিমাণ এতটাই কমে গেছে যে পরিবার নিয়ে চলা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। মালিকপক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করায় তাদের পক্ষে বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন।
হবিগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব আলী বলেন, আঞ্চলিক সড়কে অটোরিকশা বন্ধ না করা হলে দূরপাল্লার বাস চালিয়ে পরিবহনশ্রমিকরা জীবিকা জোগাতে পারছে না। তাহলে বাস চালিয়ে কী করবে? এ ব্যাপারে মালিক শ্রমিক সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
হবিগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শঙ্ক শুভ রায় বলেন, আমরা অচিরেই শ্রমিকদের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে প্রশাসন শিগগিরই অটোরিকশা বন্ধ না করলে এই রুটটি চালু রাখা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হবে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন বলেন, বাস বন্ধের বিষয়ে মালিক-শ্রমিক কোনো পক্ষই আমার সঙ্গে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি। তবে বিষয়টি আমি দেখছি, যাতে দ্রুত বাস চালু করা যায়।
এনএ