রংপুরে শিশুর অণ্ডকোষ নেই সন্দেহে তদন্ত কমিটি
রংপুরে মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে ১৫ মাস বয়সী এক শিশুর ভুল অপারেশনে অণ্ডথলিতে থাকা দুটি অণ্ডকোষ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস। তবে এ অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৫ জুলাই) দুপুরে রংপুর সিভিল সার্জনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা নগরীর ধাপ শ্যামলী লেন পুলিশ ফাঁড়ির দক্ষিণে অবস্থিত মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শনে যান। সেখানে রোগীদের থাকার জন্য সংকোচিত পরিবেশ, নোংরা অবস্থায় পোস্ট অপারেটিভ কেয়ার পরিলক্ষিত হয়।
বিজ্ঞাপন
পরে রোগীদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে ৫ম তলার (বেড নং- এবি-১১) সাজিদ হোসেন নামে এক শিশুর অণ্ডকোষ অপারেশন অবস্থায় দেখা যায়। পরে ফাইলপত্র ও ভর্তির ফরমের অপারেশন নোট যাচাইয়ে শিশুটির অণ্ডথলিতে থাকা দুইটা অণ্ডকোষ কেটে ফেলার একটি তথ্য নজরে আসে। তবে কোন চিকিৎসক এ অপারেশনটি করেছেন, তার নাম ও স্বাক্ষর ছিল না। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কোনো জবাব দিতে পারে নাই।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) তদন্তের স্বার্থে শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম চেয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করেন সিভিল সার্জন। যার স্মারক নং- সিএস/রং/২৯ /২০২২/ ১৯৮৭/১ (৮)।
সূত্র বলছে, ভুল অপারেশন হয়েছে কি না বা অদৌ শিশুটির অণ্ডকোষ কাটা পড়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় বুধবার রংপুর সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদকে আহ্বায়ক, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান শিশু সার্জারি বিভাগের ডা. বাবলু কুমার সাহাকে সদস্য সচিব এবং রংপুর সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রবি শংকর মণ্ডলকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গঠিত কমিটি চিকিৎসক, রোগী ও তার স্বজন এবং ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করবে।
ভুক্তভোগী শিশুর স্বজনরা জানিয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে শিশু সাজিদ হোসেন (১৫ মাস)। জন্মের পর থেকে ওই শিশুর অণ্ডথলিতে দুইটা অণ্ডকোষ দেখতে না পাওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের সরণাপন্ন হয় পরিবার। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শে শিশু সাজিদকে নিয়ে রংপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাহফুজুল হক মানিকের কাছে আসেন তারা। এক পর্যায়ে চিকিৎসক মানিক শিশুটিকে দ্রুত অপরেশন করাতে পরামর্শ দেন।
শিশুটির নানা মোজাম্মেল হোসেন জানান, চিকিৎসক মানিক নিজে অপারেশন করানোর পাশাপাশি কম খরচে সবকিছু করে দিবেন বলে আশ্বাসও দেন। ওই চিকিৎসকের পরামর্শে গত ২৩ জুলাই সাজিদকে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে অপারেশন করাতে ভর্তি করায়। এ সময় তাদের সঙ্গে অপারেশনসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৪০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। কিন্তু সিভিল সার্জন পরিদর্শনে গিয়ে ভুল অপারেশনের ঘটনাটি জানাজানি হলে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) তাদের সেখান থেকে রিলিজ দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে অপারেশন প্রসঙ্গ জানতে চাইলে ডা. মাহফুজুল হক মানিক বলেন, যা শুনেছেন তা ভুল। অপারেশন ঠিক হয়েছে। শিশুটির অণ্ডকোষ ওপরে ছিল, তা নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর অপারেশন নোটে স্বাক্ষর কিংবা অন্ডকোষ কেটে ফেলার বিষয়টি ভুল করে লিখা হয়েছে। পরে আমি সংশোধন করে দিব।
এদিকে এসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে নারাজ মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ। তাদের স্টাফ থেকে শুরু করে পরিচালনা পর্ষদের কেউই ঘটনাটি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদ বলেন, শিশুটির ক্ষেত্রে ভুল অপারেশন হয়েছে কি না তা তদন্তের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চেয়ে রমেক হাসপাতাল অধ্যক্ষ বরাবর আবেদনও করেছি। শিশুটিকে নিয়ে তার পরিবার গ্রামে চলে গেছে। আমরা তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছি। সবকিছু দেখে এবং পর্যবেক্ষণ শেষে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তবে অণ্ডকোষ কেটে ফেলার বিষয়টি এখনই সঠিক কি না তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই