লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সম্পত্তির জন্য হাত-পা শিকলে বেঁধে ‘গুমের’ চার দিন পর সেই বৃদ্ধ মোহাম্মদ উল্যাকে বাড়িতে ফিরেয়ে এনেছেন চার ছেলে। রোববার (২৪ জুলাই) ঢাকার অজ্ঞাত স্থান থেকে তাকে বাড়িতে আনা হয়।

সোমবার (২৫ জুলাই) বিকেলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে গত চার দিন মোহাম্মদ উল্যা কোথায় ছিলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। অভিযুক্ত চার ছেলে মাসুদ আলম, আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম ও উজ্জল হোসেনও সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না।

তবে তাদের দাবি, মোহাম্মদ উল্যা অসুস্থ ছিলেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন তিনি সুস্থ আছেন। এ জন্য তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।

মোহাম্মদ উল্যাহ উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরবংশী গ্রামের স্টিল ব্রিজ এলাকার (আবু তাহের মেম্বার বাড়ি) মৃত অজি উল্যার ছেলে।

তবে মোহাম্মদ উল্যা অসুস্থ নন বলে জানিয়েছেন তার বৃদ্ধ মা হালিমা খাতুন, বোন ফাতেমা খাতুন ও মেয়ে রাবেয়া সুলতানা। তারা জানান, মোহাম্মদ উল্যার স্ত্রী রোকেয়া বেগমসহ চার ছেলে সম্পত্তি বাগিয়ে নিতে গুমের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এখন প্রশাসনের চাপে পড়ে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চারজনের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার (২২ জুলাই) ভোর রাতে তার হাত-পা শিকলে বেঁধে ঘর থেকে বের করে নেয় অভিযুক্ত ছেলেরা। তার চিৎকারে পাশ্ববর্তী আনোয়ার হোসেন সবুজ ও ইব্রাহিম ঘর থেকে বের হয়ে ঘটনাটি দেখতে পায়। এ সময় বাধা দিতে গেলে সবুজ ও ইব্রাহিমকে মারধর করে ওই চারজন। একপর্যায়ে মোহাম্মদ উল্যাকে বাড়ি থেকে নিয়ে গুম করে রেখেছিলেন নিষ্ঠুর তার ছেলেরা।

এ ঘটনায় একই দিন বিকেলে মোহাম্মদ উল্যাকে অমানবিক নির্যাতন ও রাতের অন্ধকারে হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে গুম করার প্রতিবাদে স্থানীয়রা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ সম্মেলন করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, মোহাম্মদ উল্যার কয়েক একর কৃষিজমি রয়েছে। প্রায় দুই কোটি টাকার ১৫টি গরুর দুগ্ধ খামার রয়েছে। তার ছেলেরা পরিবার নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস করে আসছেন। তারা চাচ্ছেন, মোহাম্মদ উল্যা জীবিত থাকতেই যেন তার সম্পত্তির বণ্টন হয়। কিন্তু মোহাম্মদ উল্যা রাজি হচ্ছেন না। এ জন্য স্ত্রী রোকেয়াসহ ছেলেরা ষড়যন্ত্র করে তাকে গুম করেছেন। এখন পুলিশ প্রশাসনের চাপে পড়ে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

ঘটনার দিন অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম সবাইকে জানিয়েছেন, মানসিকভাবে অসুস্থ বাবাকে তারা চিকিৎসার জন্য একটি সংস্থার কাছে নিয়ে গেছেন। সংস্থার নাম জানতে চাইলেও তিনি বলতে পারেননি। এ সময় তিনি সবার সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ উল্যার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, তিনি (মোহাম্মদ উল্যা) আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেন। তার সম্পত্তির সবকিছু তিনি নিজেই ভোগ করছেন।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া জানান, বৃদ্ধ মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলেরা তার চিকিৎসার জন্য রাতে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর ছেলেরা তাকে রোববার রাতে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এনএ