টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে শনিবার (২৩ জুলাই) মধ্যরাতে। তখন থেকেই সাগরে যাত্রা শুরু করেছেন বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলেরা। প্রথম দিনেই সাগর মোহনা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে ট্রলারগুলো। এতে হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে।

তবে নিষেধাজ্ঞার আগেই বহু ট্রলার নিয়ে সাগরে গিয়েছেন প্রবাভশালী জেলেরা। তারাও মাছ ধরে আজ ফিরতে শুরু করেছেন বলে অভিযোগ জেলেদের।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ নিয়ে পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে পৌঁছেছে ৩০ থেকে ৩৫টি মাছ ধরার ট্রলার। শ্রমিকরাও ট্রলার থেকে মাছ নামানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আশানুরূপ মাছ পাওয়ায় হাসি ফুটেছে জেলে ও ট্রলার-মালিকদের মুখে।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলেরা জানান, ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাগরে যেতে পারেনি তারা। অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে কোনোভাবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সরকারের দেওয়া ৮৬ কেজি চাল দিয়ে জীবন চালিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেন তারা। এ বছর তারা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ইলিশ পাবেন এবং পরিবারের অভাব গুছবেন বলে আশা করছেন।

আবদুস ছত্তার, মতলেব মীর, সোবাহানসহ আরও কয়েকজন জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে আমরা রাতেই সাগর মোহনায় জাল ফেলি। যে মাছ পেয়েছি, তাতে আমরা খুশি। সকাল সকাল এসে বাজার ধরেছি। তাই দামও ভালো পেয়েছি।

রশিদ খান, কবির হোসেন, আলতাফসহ কয়েকজন জেলে অভিযোগ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগেই বহু ট্রলার সাগরে গিয়েছে। তারাও আজ ফিরেছে। তারা আমাদের আগে গিয়ে জাল ফেলেছে। আমরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিনি। আল্লাহ আমাদের নিরাশ করবেন না।

জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, প্রথম দিনে অন্তত ৩০টি মাছ ধরার ট্রলার ঘাটে এসেছে। তারা ভালো পরিমাণে মাছ নিয়েই ফিরেছে। এরা সাগর মোহনার মাছ ধরে। গভীর সমুদ্রে যারা মাছ ধরতে গিয়েছেন, তারাও দুই-তিন দিনে ফিরবে। এবার আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। 

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, প্রথম দিনে বিএফডিসির মাছবাজারে মোট ১১ হাজার ৮৬৯ কেজি মাছ বিক্রি হয়েছে। তার মধ্যে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৭৮০ কেজি। মোট মাছ বিক্রি হয়েছে ৬৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা। যার মধ্যে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৮৪ হাজার ৪৬০ টাকা।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জেলেরা আগের থেকে অনেক সচেতন। তারা নিষেধাজ্ঞা পালন করেছেন। নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে যাত্রা করেছেন জেলেরা। তবে সাগর মোহনায় যারা মাছ শিকার করেন, তারা মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন। ভালো পরিমাণে ইলিশ পাচ্ছেন তারা। নিষেধাজ্ঞার সুফল পাচ্ছেন তারা।

প্রসঙ্গত, দেশের সমুদ্রসীমায় মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর আগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। এরই অংশ হিসেবে গত ২০ মে মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। শনিবার (২৩ জুলাই) মধ্যরাতে শেষ হয় এই নিষেধাজ্ঞা।

খান নাঈম/এনএ