কিশোরগঞ্জ শহরের পৌর মার্কেটের মোরগমহল এলাকায় বৃহস্পতিবার বসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চামড়ার সবচেয়ে বড় হাট। এ হাটে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পশুর চামড়ার ভালো দাম মেলেনি। সরকার নির্ধারিত ৪০-৪৪ টাকা ফুটের চামড়া বিক্রি হয় মাত্র ২০-২৫ টাকায়।

এমন পরিস্থিতিতে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। পুঁজি ওঠা তো দূরের কথা, প্রক্রিয়াজাতকরণের লবণ এবং পরিবহন খরচই ওঠাতেই হিমশিম খান তারা। অন্যদিকে ঢাকা থেকে আসা খুচরা ব্যবসায়ীরা দোহাই দেন বৈশ্বিক মন্দার। পাশাপাশি দাবিও করেন সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুসরণের। তবে বাজার ঘুরে এমন দাবির কোনো সত্যতা পাননি ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদক।

সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নরসিংদী, নেত্রকোণা ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার পশুর চামড়া নিয়ে এ হাটে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেকেরও কম হাঁকেন। এতে চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ফের পরিবহন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচের ভয়ে অনেকটা পানির দরেই চামড়া বিক্রি করে বাড়ি ফেরেন তারা। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে হাটে গিয়ে কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থেকে গরুর তিনশ চামড়া নিয়ে আসা গৌরাঙ্গের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুধবার রাতে এ বাজারে চামড়া নিয়ে আসি। যেভাবে দামদর হচ্ছে, এভাবে বিক্রি করলে লাখ টাকার বেশি লোকসান হবে। তাই বিক্রি না করে চামড়া ফিরত নিয়ে যাচ্ছি।

>> আরও পড়ুন : সিন্ডিকেটের কব্জায় কোরবানির পশুর চামড়া

হবিগঞ্জ জেলা থেকে চামড়া নিয়ে আসা আবদুল কদ্দুস জানান, সিন্ডিকেটের কারণে বাধ্য হয়ে ৪০ টাকা ফুটের চামড়া মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। হাটে ফুট হিসেবে চামড়া বিক্রি হয়নি, হয়েছে পিস হিসেবে। তিনি বলেন, এবার দুই-আড়াই লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে। এবার হাটে কিছু ট্যানারি দালাল এসেছে। তাদের এ সিন্ডিকেটের হাতেই জিম্মি ঐতিহ্যবাহী বিশাল এ চামড়ার হাট। 

চামড়া কিনতে আসা রবি নামে এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে জানান, গত বছরের তুলনায় এবার চামড়ার মূল্য কম। তাই এবার একশ চামড়া কিনেছি। বাজারে কম ট্যানারি মালিক এসেছেন। তাই কম মূল্যেই চামড়া বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যাপারীরা। তবে ঢাকা থেকে কিছু খুচরা ব্যবসায়ী এসেছেন। তারা এখান থেকে কিনে লাভে ট্যানারিতে বিক্রি করবেন।

ঢাকা থেকে চামড়া কিনতে আসা ব্যবসায়ী মো. আরিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ১ হাজার ৫০০ পিস চামড়া কিনেছি। বিশ্ব বাজারে মন্দা। এরপরও সরকার নির্ধারিত রেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই চামড়া কিনেছি।

এসকে রাসেল/আরএইচ