বিয়ে হচ্ছে না মেয়েদের, ঝুপড়ি ঘরে ১০ সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন
৮ মেয়ে ও ২ ছেলেকে নিয়ে জরাজীর্ণ ও ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মো. নাজিম উদ্দিন (৫৫)। বিবাহযোগ্য তিন মেয়ে থাকলেও ঘরের অভাবে বিয়ে হচ্ছে না। তাদের অন্যের বাড়িতে থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে কাজ করতে দিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাতিয়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের গুল্যাখালী ছৈদিয়া বাজারের পশ্চিমে ভাঙা বেড়া এবং পলিথিনে মোড়ানো ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস নাজিম-ফেরদৌসী দম্পতির। অভাবের পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি আর শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তাদের জীবন। বৃষ্টি হলে পানিতে ভেসে যায় ঘরের মেঝে। দিনের বেলায়ও পৌঁছে না সূর্যের আলো।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানান, নাজিম উদ্দিন প্রথম দিকে ওছখালী পুরাতন বাজারে জিলাপি দোকানে কাজ করতেন। এরপর স্থানীয় বড় মিয়ার বাজারে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। পরে ছৈদিয়া বাজার হাই স্কুলের সামনে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। বর্তমানে মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় কোনো কাজ করতে পারেন না। ৮ মেয়ে ও ২ ছেলের মধ্যে বড় মেয়েকে ঋণ করে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ৩ মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলেও ঘর ও অর্থের অভাবে তাদের অন্যের বাড়িতে থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে কাজ করতে দিয়েছেন। বড় ছেলে আবদুর রহমান স্থানীয় মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী মঞ্জু রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ছোটবেলায় মামার ভ্যানগাড়ি থেকে জিলাপি ও ঝালমুড়ি খেতাম। বর্তমানে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা আলীর কাছে এই পরিবারের জন্য মুজিববর্ষের একটি ঘরের দাবি করছি।
মো. নাজিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আগে ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অসুখে আমার সেই ঝালমুড়ি বিক্রি বন্ধ। এখন খুব কষ্টে দিন যায়। বৃষ্টি হলে ঘরে থাকা যায় না। ৩ মেয়ে বিবাহ উপযুক্ত কিন্তু ঘরের কারণে তাদের বিয়ে হচ্ছে না। ঘরে তাদের থাকার মতো জায়গা নেই। এখন আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই।
তিনি আরও বলেন, আমার এই ঘরে থাকার মতো অবস্থা নেই। এতগুলো সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছি। শেখ হাসিনা গরিবের মা। তিনি যদি আমাকে একটা ঘর দেন, তাহলে অনেক উপকার হতো। আমাকে একটা ঘর দিলে সারাজীবন জায়নামাজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করব।
নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়েরা বিয়ের উপযুক্ত হইসে। কিন্তু এই ঘরে থাকার মতো ব্যবস্থা নেই। বেতন ছাড়া শুধু থাকা-খাওয়ার শর্তে মেয়েরা অন্যের বাড়িতে থাকে। ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে বড় বিপদে আছি।
নাজিম উদ্দিনের ছেলে মো. আবদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলে, আমি মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। কাউকে বলতে পারি না, আমাদের ঘর নেই। আমি ছোট তাই কাজও করতে পারি না। নিজেদের বাড়ির পরিচয় দিতে পারি না।
হাতিয়া পৌরসভার মেয়র কে এম ওবায়েদ উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নাজিম উদ্দিনকে চিনি। বর্তমানে সে কাজ করতে পারে না। তবে সে কখনো আমার কাছে ঘরের জন্য আসেনি। তারপরও আমি খোঁজ নিচ্ছি। কথা দিচ্ছি আগামী দিনে বরাদ্দ পেলে তার জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।
হাসিব আল আমিন/এসপি