সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী বিথি আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে বরিশাল সার্কিট হাইজে এসেছেন মা হাসিনা বেগম। তিনি পেশায় গৃহকর্মী। অন্যের ঘরে কাজ করে সংসার চালান, ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করান। বয়সের ভারে এখন অনেকটা ক্লান্ত তিনি। তাই মেয়ের পরামর্শে সাহায্যের আবেদন করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরে। 

আবেদন মঞ্জুর করার স্বল্প সময়ের মধ্যেই মনের আশা পূরণ হয়েছে হাসিনা ও তার মেয়ের। একটি ছোট্ট দোকান করার সমস্ত উপকরণ উপহারস্বরূপ বুঝে পেয়েছেন তারা। শুধু হাসিনা ও তার মেয়ে বিথি আক্তারকে নয়, এমন ৬৭ পরিবারকে সমাজসেবা অধিদপ্তর পুনর্বাসন করেছে। অতিদারিদ্রের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দের ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের আওতায় এসব পরিবারকে সহায়তা করা হয়।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সকালে সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার ৬৭ জনের হাতে সহায়তার উপহার তুলে দেন।

তিনি বলেন, অসহায় এসব পরিবারের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সেলাই মেশিন, ভ্যান গাড়ি, গবাদি পশু, মুদি ও চায়ের দোকানের উপকরণ ও নগদ টাকা দিয়েছি। যারা উপহার পেয়েছেন আশা করছি তারা ভিক্ষা থেকে দূরে সরে আসবেন, নতুন জীবন গড়ে তুলবেন। 

সমাজসেবা অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল মামুন তালুকদার বলেন, বরিশাল জেলায় এখন পর্যন্ত আমরা ৪৬৫ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের আওতায় নিয়ে এসেছি। আমরা চাই বরিশালসহ দেশের সকল জেলা ভিক্ষুকমুক্ত হবে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, যারা এতদিন ভিক্ষা করছিলেন, এই সহায়তা পেয়ে তারা আর ভিক্ষা করবেন না বলে আশা করি। জীবন ধারণের সুন্দর একটি উপকরণ খুঁজে পেলেন তারা। আমরা প্রত্যাশা করছি এর মাধ্যমে তারা আবারও সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবেন।

সহায়তা পেয়ে হাসিনা বেগমের মেয়ে বিথি আক্তার বলেন, আজকে আমরা অনেক খুশি। এখন আর আমার মাকে অন্যের ঘরে কাজ করতে হবে না। আমার লেখাপড়ার জন্য কারও কাছে হাত পাততে হবে না। নতুন করে বেঁচে থাকার অবলম্বন পেলাম।

সেলিম বলেন, ৮ বছর ধরে আমার চলাচল করতে সমস্যা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করায় তারা আজ আমাকে দোকানের মালামাল দিয়েছেন। এখন আমি নিজে আয় করতে পারব।

রবিউল ইসলাম বলেন, আমি আজকে নতুন একটি ভ্যান পেয়েছি। এর মাধ্যমে নিজের উপার্জন করতে পারব। এর আগে আয় করতে পারতাম না। এখন আর সেই বাধা রইলো না।

শাহ আলম মৃধা বলেন, আগে একটি রেস্টুরেন্টে আমি কাজ করতাম। এরপর ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে সেই চাকরি চলে যায়। সমাজসেবা অধিদপ্তর এর আগেও আমাকে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়েছে। এখন ব্যবসা করার জন্য কিছু উপকরণ দিয়েছেন। আশা করি আমি এখন আয় করতে পারব। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর