সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। 

এ ঘটনায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে দাঙ্গা সংঘটনের অভিযোগ এনে সালাহ উদ্দিন কচি বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় আকাশ সাহাকে অভিযুক্ত করে শনিবার (১৬ জুলাই) রাতে মামলা দায়ের করেন। 

রাত সাড়ে ১১টায় অভিযুক্ত আকাশ সাহাকে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রোববার (১৭ জুলাই) নড়াইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মো. মোরশেদুল আলম রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

স্ট্যাটাস সম্পর্কে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে মানুষ তার না বলা কথাগুলো ডায়েরির পাতায় লিখত। এখন আর ডায়েরির পাতায় না লিখলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখে। তাই বলতে পারেন পারিপার্শ্বিক সব কিছু মিলায়ে মনের মধ্যে লুকায়িত দীর্ঘদিনের না বলা কথাগুলো নিজের ভেরিফাইড আইডিতে স্ট্যাটাস আকারে বলেছি। আমার জন্ম বেড়ে ওঠা নড়াইলে, কিন্তু সেই চেনা নড়াইলকে বড্ড অচেনা লাগছে আজ। নড়াইলের এমন অস্থিতিশীলতা আগে কখনো দেখেন নাই তিনি। 

তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

একটু বোঝার চেষ্টা করছি, আর কত দিক থেকে আক্রমণ হতে পারে। প্রথম আক্রমণের কথা হয়তো সবাই ভুলে গেছে, তাই মনে করিয়ে দিচ্ছি। প্রথম ঝামেলা করল তারা মাওলানা মামুনুলকে নিয়ে। তাকে যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা দিল, তখন ওয়াজ করার জন্য তাকে নড়াইলে আনা হলো। 

কথা হলো, যখন ওয়াজ মাহফিল হয়, সেটার পারমিশন দিয়ে থাকেন ডিসি, নিরাপত্তার ব্যাপার  দেখেন এসপি। এখানে এমপিদের কোনো কাজই নেই। কিন্তু ডিসি বা এসপি থেকে আমাকে বিন্দুমাত্র না জানিয়ে ওয়াজ মাহফিল দেওয়া হলো নোয়াগ্রামে। যেখানে আমার শ্বশুর বাড়ি। তাকে আগেই বলা হলো যে, ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি নেওয়া আছে, আপনি চলে আসেন। অথচ কালনা ঘাট পর্যন্ত আনার পর তবেই কেবল ডিসিকে জানাল, এসপিকে জানাল। ঘাট থেকে যখন তাকে বলা হলো যে, আপনার চিঠি কোথায়, সে দিতে পারল না। মাহফিল কর্তৃপক্ষ তখন আমাকে ফোন করে বলল, আপনি সমস্যা ঠিক করেন।

কথা হলো, তখন এই সমস্যার  সমাধান করা কিভাবে সম্ভব? এটা তো পুরোটাই একটা প্রক্রিয়া, যা আরও সাতদিন আগে থেকে করতে হয়।

তখন ওই লোকগুলো বলা শুরু করে দিল, আমি নাকি ওয়াজ মাহফিল হতে দিচ্ছি না। পুরো খেলাটা খেলেছে এমনভাবে, তাকে আমার শ্বশুর বাড়ি এলাকায় এনে সরকারের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, আমি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মানছি না। আর যদি না আসতে পারে, তাহলে প্রচার করা হবে যে, মাশরাফি ওয়াজ করতে দেয় না। দুই দিক থেকেই তাদের জয়। আর দুই পক্ষের কাছেই আমাকে খারাপ বানাবে।

তবে যাই হোক, আল্লাহ মালিক, সত্য আর চাপা থাকেনি। সবাই কম-বেশি জেনেছে সত্যিটা। আর যারা জানে না, তারা ভুল বুঝেই আছে। এবার উল্টো খেলা খেলল তারা। সনাতন ধর্মাবলম্বি মানুষদের ওপর আক্রমণ করে তাদেরকে বিপদে ফেলা, পাশাপাশি আমাকেও বিপদে ঠেলে দেওয়া।

এমনকি, কিছুদিন আগে কালিয়ার মির্জাপুরে সম্মানিত একজন শিক্ষককে অপমানের ঘটনায়ও আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ ওটা আমার আসনের ভেতর নয়। যাক, আপনারা সব তো করলেন। এবার আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ, পেছন থেকে আঘাত করতে করতে আপনারা ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তো আসুন, সামনে থেকে আঘাত করুন। আমার সঙ্গে সরাসরি লড়াই করুন। আমি সাধুবাদ জানাব। কিন্তু আমাকে ভোগানোর জন্য দয়া করে সাধারণ ও অসহায় মানুষের আর ক্ষতি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন, লড়াই আমার সঙ্গে করুন। আমি জানি, নড়াইলে রাজনীতি যাদের কাছে পেশা, তাদের কাছে আমি এখন নেশা...

প্রসঙ্গত শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দির পরিদর্শন করেছেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা।

এ সময় তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। একইসঙ্গে তালিকা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও পরিবারের সঠিক সংখ্যা জানাতে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি আশ্বাস প্রদান করেন।

সময় তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। একইসঙ্গে তালিকা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও পরিবারের সঠিক সংখ্যা জানাতে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি আশ্বাস প্রদান করেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসন সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করেছেন। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সব ইউনিট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। ভুক্তভোগীদের ক্ষতি যা হয়েছে তা সমাধান করা গেলেই সমাধান হবে না, এই পরিস্থিতিতে তাদের মানসিক ক্ষতিটা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে। মানসিকভাবে ভীতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা তাদের আশ্বস্ত করছি ও চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত তারা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারেন।

এমএএস