গরিব হলেও মানুষের কাছে হাত পাততে ভালো লাগে না। তাই সকাল থেকে বাসায় অপেক্ষা করছি, কিন্তু গোশত নিয়া কেউই আসে নাই। ঘরে ছোট ছেলে আছে, সে এখন পর্যন্ত কিছু বোঝে না। বারবার গোশত খাওয়ার বায়না ধরে। তাই ছেলেকে বুঝ দিতে বাজারে আসছি ব্রয়লার মুরগি কিনতে। টাকাওয়ালারা উট, গরু ও ছাগল কোরবানি দেয়। আর মুরগির গোশতই আমাদের কাছে উট-গরুর গোশত।

এমনটাই বলছিলেন দিনমজুর আবদুল বারেক (৩৭)। রোববার (১০ জুলাই) দুপুরে বরগুনার মুরগি বাজারে মুরগি কিনতে এলে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার ২নং গৌরিচন্না ইউনিয়নের লাকুরতলা গ্রামের থাকেন।

বারেক বলেন, ৩-৪ বছর আগে ৪ হাজার টাকা ভাগে কোরবানি দিয়েছিলাম। এটাই ছিল জীবনের প্রথম ও শেষ কোরবানি। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এরপর আর কোরবানি দিতে পারিনি। বয়স বেশি না হলেও কিডনির সমস্যার কারণে আগের মতো কাজ করতে পারি না, তাই আয় রোজগার কম। আমার এগারো বছরের ছেলে আছে, সকাল থেকেই সে গরুর গোশত আনার জন্য বলছে। আমার কাছে তো আর ওতো টাকা নাই, তাই ২ কেজি ১০০ গ্রামের একটা মুরগি কিনেছি। এটা দিয়েই ছেলেকে বুঝ দেয়ার চেষ্টা করব। 

তিনি বলেন, আগের এলাকা ছেড়ে নতুন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকছি। এখানের অনেকের সঙ্গে পরিচয় নেই তেমন। অনেকেই এখনও জানে না আমরা গরিব একটা পরিবার এখানে থাকছি। তাই হয়তো কেউ গোশত নিয়ে আসছে না। অন্যের দুয়ারে দুয়ারে যেতেও ভালো লাগে না। 

শুধু আবদুল বারেকই নয়, বরগুনার মুরগির দোকানগুলো ঘুরে এমন বহু নিন্মআয়ের মানুষের দেখা মিলেছে, যারা মুরগি দিয়েই পরিবার নিয়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করছে। এসব ছিন্নমূল ও নিন্মআয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সমাজের উচ্চবিত্তদের অনুরোধ জানিয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। 

এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বারের সভাপতি জালাল আহম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে দানের গোশত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে তা গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

এমএএস