শিক্ষক বাবার ৫ সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ছায়েদ উল্যার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস। সন্তানের এমন সাফল্যে মা-বাবা ও পরিবারে থাকে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। কিন্তু পরিবারটির কাছে এমন সাফল্য নিতান্তই স্বাভাবিক।
ভ্রু কোঁচকানোর মতো কথা! কারণ, শিক্ষক ছায়েদ উল্যার আরও চার সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। তাই পরিবারটির প্রতি রয়েছে গ্রামবাসীর বিশেষ দৃষ্টি। সমাজের কাছে পরিবারটি হলো আদর্শের আঁতুড়ঘর, এমন মন্তব্য তাদের।
বিজ্ঞাপন
পাঁচ সন্তানের এমন কৃতিত্বে এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন শিক্ষক বাবা ও তার সন্তানরা। সচরাচর এমন নজির কোথাও দেখা যায় না বলে এলাকার মানুষও তাদের নিয়ে গর্ব করেন। তাদের সম্মান করেন গ্রামের ছোট-বড় সবাই।
ছায়েদ উল্যা উপজেলার চরলরেঞ্চ ইউনিয়নের মুসলিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের দক্ষিণ ওয়াপদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে বর্তমানে অবসরে রয়েছেন।
সন্তানদের মানুষ করতে পেরে, তাদের উজ্জ্বল জীবনের বৈতরণি পার হওয়ার সিঁড়ি তৈরি করে নিজেও খুশি শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনায় সম্পত্তিকে কখনো জরুরি মনে করেননি। সন্তানই সম্পদ, এমনটা ভেবে ব্যয় করে দিয়েছেন ছায়েদ উল্লাহ ও শামিমা আক্তার দম্পতি।
সন্তানদের উজ্জ্বল সব কৃতিত্ব নিয়ে তিনি জানান, তার বড় ছেলে শামসুল আলম দিপু ২০০৭-০৮ সেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ভালো ফল নিয়ে উত্তীর্ণ হন বিভাগে। পরে ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে যোগ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। এখন তিনি সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
তার দ্বিতীয় ছেলে শাজাহান সিরাজ আল মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন ২০১০-১১ সেশনে। ২০১৬ সালে এ বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ও মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। এখন তিনি কর্মসংস্থান ব্যাংকের লক্ষ্মীপুর শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
তৃতীয় ছেলে আশরাফুল ইসলাম শহীদ ২০১১-১২ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ও মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কৃষি ব্যাংকের লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
চতুর্থ ও ছোট ছেলে শরীফুল ইসলাম বিজয় ২০১৬-১৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে অনার্সে ভালো ফল করে তিনি একই বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।
আর চলতি বছর তার একমাত্র মেয়ে জন্নাতুল ফেরদৌস ২০২১-২২ সেশনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৫৯৯তম স্থান অর্জন করেছেন। তিনিও অগ্রজদের পদচিহ্ন এঁকে এখানে লেখাপড়া করে শিক্ষিত হতে চান বলে জানান তার শিক্ষক বাবা।
শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ৩০ বছর শিক্ষকতা করেছি। অন্যের ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার ছেলে-মেয়েদেরও সুশিক্ষিত করার জন্য সচেষ্ট ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমার সব সন্তান এখন দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। শিক্ষকতার সৎ উপার্জন দিয়ে সন্তানদের মানুষ করতে পেরেছি, এটিই সর্বোচ্চ পাওয়া।
একমাত্র মেয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার জান্নাতুল ফেরদৌস লেখাপড়া শেষ করে বিচারক হতে চায়। তার মনের আশা যেন পূরণ হয়, সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
কমলনগরের উদয়ন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন। তিনি শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহর সন্তানদের শিক্ষক হতে পেরে আনন্দিত। তার প্রথম সন্তানকে না পেলেও পরের চারজনকে তিনি সরাসরি পাঠদান করিয়েছেন। এতে তিনি গর্বিত।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ছায়েদ স্যারের পাঁচ ছেলে-মেয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সবাই অত্যন্ত মেধাবী। আমি চারজনকে পেয়েছি। তাদের সবাইকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। এমন পরিবার এখনকার সময়ে পাওয়া যায় না যে সব ছেলে-মেয়েকে মানুষ করবে। পড়াশোনায় ও চাকরি ক্ষেত্রে তাদের আরও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এনএ