নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মসজিদে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তারে অভিযানে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয় পুলিশের। এ ঘটনায় ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এর আগে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সোমবার (১৩ জুন) ভোর থেকে আদমজী সড়ক অবরোধ করে রাখেন এলাকাবাসী। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে মুখোমুখি অবস্থানে যায় তারা। এ সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে সড়ক অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পরে অবরোধকারীরা আদমজী বিহারি ক্যাম্পের নতুনবাজার এলাকার নতুন সড়কে অবস্থান নেয়। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। কয়েক দফা দুপক্ষের মধ্যে পিকেটিং হয়। এতে আহত হয় অন্তত ৫০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৫০ এর বেশি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। বেলা সাড়ে ১১টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। 

এদিকে উত্তেজিত জনতাকে থামাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন স্থানীয় কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি। পরে তিনি ও তার কর্মী সমর্থকরা মিলে সকলকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। কাউন্সিলরের কথায় পরে তারা সেখান থেকে চলে যান।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মশিউর রহমান মুঠোফোনে জানায়, মসজিদে পুলিশ সদস্য আজিজুল হককে হামলার ঘটনায় একটি বিশেষ অভিযানে যায় পুলিশ। রোববার দিবাগত রাতে ওই এলাকা থেকে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর প্রতিবাদে আজ সকাল ৬টা থেকে তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দিলে তারা পাশের গলিতে অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও পঞ্চাশের বেশি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) আমীর খসরু ঢাকা পোস্টকে বলেন, মসজিদে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। সেই মামলার আসামিদের আইনের আওতায় আনতে গতকাল গভীর রাতে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সড়ক অবরোধ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বেশ কয়েক দফা তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

 প্রসঙ্গত, পুলিশের ওপর মসজিদের মুসল্লিদের হামলার ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মির্জা শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। শনিবার (১১ জুন) রাতে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১২০/১২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়। মামলার আসামিদের আইনের আওতায় আনতে সোমবার 
সকালে অভিযানে নামে পুলিশ। গ্রেপ্তার অভিযান ঠেকাতে স্থানীয়রা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে থাকে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। বেলা সাড়ে ১১টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে আনে পুলিশ। 

এর আগে গত শুক্রবার (১০ জুন) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক সৈয়দ আজিজুল হক মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, নবীকে নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে ভারতে। ভারতের বিষয় ভারতে থাকুক। এ নিয়ে আমরা নিজেদের দেশে বিশৃঙ্খলা না করি। এ কথা শুনে মুসল্লিরা ক্ষুব্ধ হলে প্রথমে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।

এক পর্যায়ে তারা জুতা নিক্ষেপ করে। পরে তার ওপর হামলা চালিয়ে গণধোলাই দেন মুসল্লিরা। এ সময় তাকে রক্ষা করতে গিয়ে দৈনিক মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার ও মসজিদের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন রবিন ও মসজিদ কমিটির সভাপতি হাকীম মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনও আহত হয়। পরে তারা তাকে উদ্ধার করে মসজিদ কমিটির সভাপতির বাসায় নিয়ে গেলে সেখানেও হামলা চালায় উত্তেজিত মুসল্লিরা।

এসপি