এবার সবচেয়ে ছোট মসজিদের সন্ধান মিলেছে বরিশালে
জনশ্রুতি অনুসারে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মসজিদ বগুড়ার সান্তাহার উপজেলার তারাপুর গ্রামে। এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির উচ্চতা ১৫ ফুট, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৮ ফুট। এর দরজা ৪ ফুট উঁচু আর দেড় ফুট চওড়া। মাত্র তিনজন নামাজ পড়তে পারেন।
এবার প্রায় ৪০০ বছর পুরোনো একটি মসজিদের সন্ধান মিলেছে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের চরহোগলা গ্রামে।মসজিদের ভেতরের উচ্চতা সাড়ে ১২ ফুট, দৈর্ঘ্যে ৬ ফুট এবং প্রস্থে ৫ ফুট। প্রবেশ দরজার উচ্চতা মাত্র সাড়ে তিন ফুট। ভেতরে তিনজনে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের মিম্বর না থাকলেও দেয়াল কেটে আকৃতি দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা বলছেন, এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া সবচেয়ে ছোট প্রাচীন মসজিদ এটি। নাম গাজী কালু দরগাবাড়ির পাঞ্জেগানা মসজিদ। আকার বা ইতিহাসগত দিকের পাশাপাশি মসজিদটি নিয়ে অলৌকিক কিংবদন্তিও প্রচলিত পুরো এলাকায়। যার মূল চরিত্র মসজিদটি ঘিরে রাখা বটগাছ বা মসজিদগাছ।
এই মসজিদ পরিচালনায় রয়েছে কমিটিও। পরিচালনা কমিটি বলছে, পুরোনো দলিল-দস্তাবেজ অনুসারে পর্তুগিজ আমল থেকেই ওখানে মসজিদ বাড়ি নামে রেকর্ড রয়েছে। তবে ঠিক কোন খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ করা হয়েছিল, তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায়নি।
গাজী কালু দরগাবাড়ির পাঞ্জেগানা মসজিদ, গায়েবি মসজিদ ও কানা মসজিদ— এই তিনটি নামে এলাকাবাসীর কাছে সমধিক পরিচিত মসজিদটি একটি বৃহদাকার বটগাছের শিকর-বাকড়ে আবৃত। এর ভেতরে দেখা যায় এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে পৃথক দুটি জানালা। মসজিদটি সম্পূর্ণ পোড়ামাটি আর চুন-সুড়কি দিয়ে নির্মাণ করা।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেন, পুরোনো দলিলের রেকর্ডপত্রে আব্দুল মজিদ সিকদার ও বন্দে আলী সিকদারের খতিয়ানে ২১ শতাংশ জমি মসজিদের নামে জনসাধারণের ব্যবহার্য উল্লেখ করা রয়েছে। এ ছাড়া স্থানটিকে মসজিদ বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে, পর্তুগিজ আমলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মসজিদটি পর্তুগিজ আমলের নির্দশন। শুধু এটি নয়, পতাং ও নাপিতেরর হাট নামক দুটি স্থানে এমন ছোট আরও দুটি মসজিদ ছিল। সেগুলো এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেন, মসজিদটিকে অসম্মান করা বা এর মানতের টাকা বেহাত যারা করেছে, তাদের অনেকের অকালমৃত্যুও আমি দেখেছি।
শুধু অকালমৃত্যুর কথা নয়, মসজিদটিকে রক্ষাকারী বিরল প্রজাতির বটগাছটিও কিংবদন্তির অংশ হয়ে উঠেছে। যদিও আবৃত করে রাখা গাছটি পর্তুগিজ আমলের কি না, তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
মসজিদ বাড়ির বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম সেলিম বলেন, একবার এক মুরব্বি মসজিদের গাছটির পাতা ছিঁড়েছিল। সেদিন থেকেই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমাদের পূর্বপুরুষরা শুনে এসেছেন মসজিদ গাছটির পাতা ছেঁড়া, অসম্মানন করা বা ডাল কাটলে ক্ষতি হয়। আমরাও সেই বিশ্বাস ধারণ করি। এ গাছটির পাতা যেখানে পড়ে, সেখানেই মজে পচ যায়, কেউ ধরে না। গাছটির শিকড়, ডালপালা বিভিন্ন দিকে নেমে গেছে, আমরা ওসব কিছুই ধরি না।
তিনি আরও বলেন, অনেক লোক আসেন এখানে মনের আসা পূরণে মানত করে। মূলত তাদের টাকায় মসজিদটির উন্নয়ন করা হয়। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় না হলেও যারা মানত করেন, তারা নামাজ পড়েন এখানে। তিনি দাবি করে বলেন, আমার মনে হয় বিশ্বের ছোট মসজিদ এটি। গিনেস বুকে এ মসজিদের নাম ওঠানোর দাবি জানাচ্ছি।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা হুমায়ূন বিশ্বাস বলেন, মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে কারও তেমন কিছু জানা নেই। আমার দাদা ১০৭ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনিও মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে পারেনি। তবে সবাই সম্মান, ভক্তি ও শ্রদ্ধা করত গায়েবি মসজিদ বলে।
স্থানীয় বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম (৮৫) মোল্লা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এখানে লোকজন মানত করে টাকাপয়সা দিয়ে যায়। সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে খিচুড়ির আয়োজন করা হয়। তবে এখানে কোনো ভাঁওতাবাজি নেই। মসজিদ পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। টাকাপয়সার হিসাব তাদের কাছে থাকে।
তবে স্থানীয়দের দাবি, প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে এ মসজিদকে সংরক্ষণের জন্য প্রশাসন এগিয়ে আসবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ