ব্যবহারের পর সাধারণত প্লাস্টিকের সামগ্রী ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন আর সেই প্লাস্টিকের তৈরি নষ্ট জিনিস ফেলনা নয়। পুরাতন নষ্ট প্লাস্টিক কাটিংয়ের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন চেয়ার, টেবিল ও বোতল, পানির পটসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র। নষ্ট প্লাস্টিককে কাটিং করার জন্য মাগুরায় গড়ে উঠেছে কারখানাও। কারখানারা মালিক নিজের ভাগ্যবদলের পাশাপাশি তৈরি করেছেন অন্যের কর্মসংস্থান।

জানা গেছে, মাগুরা জেলার বিভিন্ন হাট, বাজার, ছোট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক কেজি দরে কিনে এনে বিক্রি করেন। জেলার কাশিনাথপুরে ৫০ শতক জায়গার ওপর গড়ে ওঠা প্লাস্টিক কাটিং সেন্টারে পুরোনো প্লাস্টিক কেনা হয়। বোতলজাত প্লাস্টিক ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার প্লাস্টিক এই কাটিং সেন্টারে কাটা হয়।

মঙ্গলবার (০৭ জুন) দুপুরে মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কের কাশিনাথপুর সড়কের পাশে গড়ে ওঠা কাটিং সেন্টার ঘুরে দেখা যায় শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা। কেউ পানিতে ধুয়ে কাটিং করে রোদে শুকাতে দিয়েছেন, আবার কেউবা রোদের মধ্যে বড় ছাতা টানিয়ে প্লাস্টিক গ্রেডিং করছেন। সেগুলো আবার কাটিং মেশিনে দিয়ে কাটছেন। প্রতিদিন ১৫ জন শ্রমিক ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন।

এই কাটিং সেন্টারে কাজ করেন বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম। সেখানে শ্রমিকের কাজ করে তিনি দিনে মজুরি পান মাত্র ৩০০ টাকা। তিনি প্লাস্টিক গ্রেডিংয়ের কাজ করেন। শুধু রোকেয়া নয়, তার মতো অনেক শ্রমজীবী নারী এখানে কাজ করে  জীবিকা নির্বাহ করছেন।

এ সময় কথা হয় নুরজাহান বেগম নামে একজনের সঙ্গে। জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্লাস্টিক বাছাই, মেশিনে দিয়ে কাটিং করাসহ নানা ধরনের কাজ করি। এই কারখানায় কাজ করে আমাদের সংসার ভালোভাবেই চলছে।

শরিফুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক বলেন, মাগুরার বিভিন্ন গাম্য হাট-বাজার থেকে কেজি দরে প্লাস্টিক কেনা হয়। বিশেষ করে জেলার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া, সীমাখালী, শ্রীপুর উপজেলার খামারপাড়া, গাংনালিয়া, শ্রীকোল, জোকা, সদর উপজেলার নতুন বাজার, জগদল এলাকা থেকে গাড়ি ভরে প্লাস্টিক কিনে কারখানায় আনা হয়। এখানে গ্রেডিং করে তা মেশিনের মাধ্যমে কাটিং করা হয়। পরে তা বস্তাভর্তি করে ট্রাকে করে পাঠানো হয় ঢাকায়।

তিনি আরও বলেন, কাটিং প্লাস্টিক ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়। এই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক দিয়ে চেয়ার, টেবিল, বোতল, পানির পট, মুরগির পানির টবসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী আবার নতুন করে তৈরি করা হয়। এখানে কাজ করে আমরা ১৫ জন শ্রমিক ভালোভাবে সংসার চালাতে পারছি।

প্লাস্টিক কারখানার মালিক ফরিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার এখানে মূলত ফেলে দেওয়া পুরোনো প্লাস্টিক কাটিং করা হয়। তারপর বস্তাভর্তি করে ঢাকায় বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। বোতলজাত প্লাস্টিক ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করা হয়। আমার এখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে ১৫ জন। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে আগামীতে আরও বড় করে এই কাটিং সেন্টার করব।

এসপি