বিবাহ বিচ্ছেদের কয়েক মিনিট পরেই ফাঁস দিলেন গৃহবধূ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জোরপূর্বক বিবাহ বিচ্ছেদে বাধ্য করার কয়েক মিনিট পরেই এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। সোমবার (৬ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
মৃত সমিজা খাতুন (১৮) ইসলামপুর উত্তরপাড়া গ্রামের হযরত আলীর মেয়ে। তিনি দেড় মাসের প্রসূতি ছিলেন বলে তার পরিবার নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
পরিবার, স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যার দিকে নিজ কক্ষে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় দেখতে পায় তার পরিবার। পরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বছর খানেক আগে সদর উপজেলার দেবিনগর গ্রামে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সমিজা খাতুনের। প্রায় ৬ মাস পর পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাখেরআলী চৌধুরীপাড়া গ্রামের শরীফ উদ্দিনের ছেলে মো. আশিক আলীর (২৫) সঙ্গে। এ নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের পর গত ৫ মাস আগে বাড়িতে না জানিয়ে আশিকের সঙ্গে পালিয়ে যায় সমিজা খাতুন। পরে দুই পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করে তারা।
সমিজা খাতুনের বাবা হযরত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে করলেও আমরা তাদের বিয়ে মেনে নেয়। এরপর থেকে জামাই আমাদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করত। কিন্তু আমার মেয়েকে জামাইয়ের পরিবার মেনে না নেওয়ার কারণে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়নি। ছেলের পরিবার গত রোববার বিবাহ বিচ্ছেদ করতে আমাদের বাড়িতে লোকজন পাঠায়। পরদিন গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের একটি গলিতে দুই পরিবার ও ইসলামপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তহিদুল ইসলাম পিকুল মেম্বারের উপস্থিতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে ভালোবেসে আশিককে পালিয়ে বিয়ে করেছিল। আমরা মেনে নিলেও ছেলের পরিবার কখনও মেনে নেয়নি। আমার মেয়ে কখনও বিচ্ছেদ চায়নি। ছেলের পরিবারের চাপে বাধ্য হয়েই জোরপূর্বক তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ করা হয়েছে।
সমিজা খাতুনের মা জানান, বিবাহ বিচ্ছেদের কয়েক মিনিট পরেই ঘরে ঢুকতেই দেখি গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে সমিজা। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই সে মারা যায়। ৮০ হাজার টাকা দেনমোহর থাকলেও আমার মেয়েকে ৬০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এ নিয়েও তার ভীষণ মন খারাপ ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের ছেলে টিপু সুলতান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অটো মেকার আশিকের সঙ্গে প্রেমের কারণে পারিবারিকভাবে হওয়া স্বামীকে ছেড়ে এসেছিল সমিজা। পরে নিজের পরিবারকে না জানিয়ে আশিকের সঙ্গে বিয়ে করার ৫ মাসেও শ্বশুর বাড়ি যেতে পারেনি। যেই ছেলের জন্য এত ত্যাগ শিকার করল, সেই তাকে ছেড়ে দিল। এ কারনে ক্ষোভে সমিজা আত্মহত্যা করেছে।
এ নিয়ে কথা বলতে ইসলামপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তহিদুল ইসলাম পিকুল মেম্বারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম ছবি ঢাকা পোস্টকে জানান, মেয়ের অমতে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনার কয়েক মিনিট পরই মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনা শুনেছি।
ঘটনার পর থেকে ছেলের পরিবার বাড়িতে তালা মেরে পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মো. জাহাঙ্গীর আলম/এমএএস