সংসারের হাল ধরতেই লেখাপড়া বাদ দিয়ে ডিপোতে চাকরি নেন অলিউর
অলিউর রহমানের মায়ের দেওয়া নাম নয়ন। পরিবারের বড় সন্তান, বাবা দিনমজুর। সংসারে অভাব থাকায় পড়ালেখা করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। সংসারের হাল ধরতে এলাকার বড় ভাইদের সহায়তায় চাকরি নেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে। সেখান থেকে যা আয় করতেন পাঠিয়ে দিতেন গ্রামে বাবার কাছে।
শনিবার (০৪ জুন) রাতে চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার পর থেকে ঘটনাটি নিজের ফেসবুকে লাইভ করছিলেন অলিউর রহমান নয়ন (২০)। লাইভ চলাকালীন হঠাৎ করে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। তার হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। কয়েক মিনিট পর লাইভও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ডিপোর বাইরে থাকা সহকর্মীরা খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদককে শনিবার রাত ১টায় নয়নের সহকর্মী রুয়েল বলেন, ও আমার সঙ্গে কাজ করে। আমরা একসঙ্গেই থাকি। কত করে বললাম আমাদের সঙ্গে বাইরে চলে আসতে। কিন্তু সে এল না। লাইভ করার জন্য আগুন লাগা কন্টেইনারের পাশেই থেকে গেল। আমরা নিজের প্রাণ বাাঁচাতে পাশের টিলায় গিয়ে আশ্রয় নিই।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে রুয়েলের কাছে খবর আসে নয়নের ক্ষতবিক্ষত লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া গেছে। রুয়েল জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা রওনা দেই চট্টগ্রামের দিকে। তার পরিবারের সবাই মৌলভীবাজার থেকে চট্টগ্রাম আসছেন লাশ নেওয়ার জন্য।
নয়নের মারা যাওয়ার খবর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলী গ্রামে পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়-স্বজনরা বিলাপ আর আহাজারি করছেন। স্বজনদের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে এসেছে। তার বাবা নিকটাত্মীয়দের নিয়ে লাশ আনতে চট্টগ্রামে রওনা হয়েছেন।
জানা যায়, নয়নের মায়ের কয়েক বছর আগে অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। এরপর বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। নতুন মা ও বাবার সঙ্গেই বসবাস করতেন নয়ন। ফটিগুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি ও কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এরপর সংসারে অভাবের কারণে পড়ালেখা বাদ দিয়ে চাকরিতে যায়। মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করত। তাই দিয়ে সংসার চলত তাদের।
অলিউরের সৎমা হাসিনা বেগম জানান, অলিউরের সঙ্গে ফোনে শনিবার দুপুর ২টায় সর্বশেষ কথা হয়। কয়েক দিনের মধ্যে তার বাড়িতে আসার কথাও ছিল।
অলিউরের বাল্য বন্ধু মাহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শৈশব-কৈশোর একসঙ্গে কেটেছে আমাদের। জীবনে অনেক কষ্ট ছিল তার। তাই কম বয়সে পড়ালেখাও বাদ দিয়েছে। হাসি-খুশি থাকত সব সময়। তাই ভেতরের কষ্টটা বোঝা যেত না। মারা যাওয়ার সময় বাঁচাও বাঁচাও বলেছে। এই আকুতি অনেক বেদনার।
অলিউর রহমানের চাচা সুন্দর আলী জানান, রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম হাসপাতাল থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয় অলিউর মারা গেছে। দ্রুত গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে তার লাশ আনার জন্য বলা হয়। তাই তার বাবা লাশ আনতে চট্টগ্রাম গেছে। আজ সকালে বাড়িতে লাশ আসবে।
ওমর ফারুক নাঈম/এসপি