শ্বশুর শাশুড়ির সেবা-যত্ন করায় টাঙ্গাইলে এক পুত্রবধূকে উপহার দিচ্ছেন ওসি মীর মোশারফ হোসেন

শ্বশুর শাশুড়ির সেবা-যত্ন করলেই উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। এমন ব‌্যতিক্রমী উ‌দ্যোগ নি‌য়ে‌ছেন টাঙ্গাইল সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন। 

ও‌সির ফোন নম্বর ফেস্টু‌নে উ‌ল্লেখ ক‌রে সেখা‌নে লি‌খে‌ছেন, বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বাবা-মায়ের নিরাপদ আবাস। পুত্রবধূ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করেন আল্লাহ তাকে আখিরাতে পুরস্কার প্রদান করবেন। সেখানে আরও লেখা ছিল- শুশ্বর শাশুড়িকে যে সেবা যত্ন করবে এবং একসঙ্গে বসবাস করবে সেই ভাগ্যবতীকে পুরস্কৃত করা হবে। 

ই‌তোম‌ধ্যে ও‌সির ফোন নম্ব‌রে গৃহবধূরা ফোন ক‌রছেন। আর ফোন পে‌য়েই টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি, পোড়াবাড়ির চমচম ও ক্রেস্ট নি‌য়ে বা‌ড়ি বা‌ড়ি হা‌জির হ‌চ্ছেন ও‌সি মোশারফ‌ হো‌সেন। ও‌সির এমন উপহা‌র ও ফেস্টু‌নের ছ‌বি সামা‌জিক যোগা‌যোগমাধ‌্যম ফেসবু‌কে ভাইরাল হ‌য়ে‌ছে।

স্থানীয় সংবাদকর্মী নওশাদ রানা সানভী ব‌লেন, তথ্য সংগ্রহের জন‌্য সদর থানায় প্রবেশ কর‌তেই একটি ফেস্টুন নজরে আসে। প‌রে ফেস্টুনের ছবি তুলে ফেসবুক গ্রুপ টাঙ্গাইল জেলা সংবাদে পোস্ট করি। বিষয়টি মানুষ ইতিবাচকভাবে নেয় এবং মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

কলেজ পাড়ার শিউলি বলেন, ও‌সির এমন এক‌টি ফেস্টু‌নের ছ‌বি ফেসবু‌কে দেখতে পায়। আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মায়ের মতো ভালোবাসি এবং তাদের সেবা-যত্ন করি। তাদের সেবা করে আমি আত্মতৃপ্তি পাই। বিষয়টি জানানোর জন‌্য ও‌সির নম্বরে ফোন করি। পরবর্তীতে বিকেলে তি‌নি উপহার নি‌য়ে আমা‌দের বা‌ড়ি‌তে আ‌সেন।

মাহমুদা আক্তার জানান, ও‌সির পক্ষ থে‌কে পুরস্কার পেয়েছি। পুরস্কার পেয়ে নিজের প্রতি আরও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আমার শ্বশুর শাশুড়িকে এমনভাবেই দেখাশুনা করি। ভবিষ্যতেও একইভাবে তাদের সেবা করে যাব।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন জানান, আমার ছেলে ও বউমা সাধ্য অনুযায়ী সেবা করে। একজন পুলিশ অফিসার আমার বউমাকে পুরস্কৃত করেছেন।

টাঙ্গাইল সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন ব‌লেন, অ‌নেক সময় লক্ষ্য করেছি, বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অবহেলায় বাবা ও মা অযত্নে জীবনযাপন করেন। অনেকেই ঠিকমতো খাবারও দেয় না। আর্থিক অবস্থা ভালো হ‌লেও সন্তানেরা বাবা-মাকে ছেড়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে আলাদা বাস করে। অনেক সন্তানই ভুলে যায় এই বাবা-মা দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের মুখে আহার তুলে দেন এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। অনেক সন্তান কাজের প্রয়োজনে বাইরে ব্যস্ত থাকে। তাদের বাবা-মা পুত্রবধূর কাছে বেশি সময় কাটায়। আমার উদ্দেশ্য ওই পুত্রবধূদের উৎসাহিত করা।

তিনি আরও ব‌লেন, যেসব সন্তান বাবা মাকে ছেড়ে দূরে চলে যায় আবার অনেকের একাধিক সন্তান থাকার কারণে বাবা-মায়ের ভরণপোষণ নিয়ে ঠেলাঠেলি করে দূরে সরিয়ে দেয় সেইসব সন্তান ও পুত্রবধূর প্রতি প্রতিবাদ স্বরূপ এই আয়োজন করেছি। এতে কোনো বাবা-মাকে অবহেলা ও বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে না।

উল্লেখ্য, এর আ‌গে টাঙ্গাই‌লের কাগমারী ফা‌ঁড়ির ইনচার্জ ‌মোশারফ হো‌সেন ‘কন্যা সন্তান বোঝা নয় আশীর্বাদ, কন্যা সন্তান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। কন্যা সন্তান জন্ম হলে ফোন করুন উপহার পৌঁছে যাবে সাথে সাথেই।’ এ ধরনের ফেস্টুন টানিয়ে ভাইরাল হ‌য়ে‌ছি‌লেন।

অভিজিৎ ঘোষ/এসপি