‘ইচ্ছা ছিল ছেলে বড় হয়ে কোনো কোম্পানিতে কাজ করবে। হঠাৎ কী এমন হলো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মানুষের ওপর আক্রমণ করতে থাকে। পাড়া-প্রতিবেশীক মারে, হুট হাট হারে (হারিয়ে) যায়, সেখন খুঁজি আনি। ৪-৫ বছর হয় শিকল দিয়া বাঁধি থুচি। যা আছিলো জমি যায়গা সব শ্যাষ করছি। এখন পথের ভিখারী। একটাই ছেলে, সুস্থ্য থাকিলে কামাই করি হামাক খাওয়ার পাইতো।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই ঢাকা পোস্টকে কথাগুলো বলছিলেন শিকলে বন্দী মানসিক ভারসাম্যহীন মশিউরের মা ছেরাতন বেগম। এ সময় ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন তিনি। 

মশিউর রহমান নীলফামারী সদর উপজেলার রামগঞ্জ ইউনিয়নের বাহালিপাড়া মাস্টারপাড়ার সালেহ উদ্দিন ওরফে টন্না মামুদ ও ছেরাতন বেগমের একমাত্র ছেলে। প্রায় চার বছরের বেশি সময় ধরে শিকলবন্দী জীবন পার করছেন মানসিক ভারসাম্যহীন এই যুবক। তার চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছে পরিবার। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে অভাবের সংসারের হাল ধরবে ছেলে। কিন্তু সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মশিউর। শুরু হয় পাগলামি। মারধর করে বাবা-মাসহ পাড়া-প্রতিবেশীকে। হুট করে ভারসাম্যহীন অবস্থায় হারিয়ে যেত সে। এরপর  দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিবার সর্বস্ব দিয়ে চিকিৎসার পরও সুস্থ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে চার বছর ধরে মশিউরকে শিকলবন্দী করে রেখেছে তার পরিবার।

মশিউরের চাচি হালিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চোয়াটাক টাকা-পয়সা খরচ করি লেখাপড়া করিয়া বিয়া দিল। হঠাৎ করি পাগল হয়া গেল। এলা চিকিৎসার জন্য সব শ্যাষ করি ফেলাইল। সরকার ছোয়াটার চিকিৎসার দায়িত্ব নিল হয়।’

মশিউরের চাচাতো ভাই আবু সাইদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা, খেলাধুলা করতাম। হঠাৎ একমাত্র ছেলে এমন হয়ে যাওয়ায় পরিবারটির সব এলোমেলো হয়ে গেছে। তার পেছনেই সব খরচ করে আজ পথের ভিখারী তারা। সহায়তা পেলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পরিবারের হাল ধরতে পারতো। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মশিউরের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা কামনা করছি।

মশিউরের বাবা সালেহ উদ্দিন ওরফে টন্না মামুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যা ছিল সব ওর চিকিৎসার পেছনে খরচ করছি। চেমারম্যানের কাছোত গেছিনো গুরুত্ব দেয় নাই। বারো তেরো বিঘা জমি শ্যাষ। আজ কিছু করিরও পাই না, খাবারও পাই না, খুব কষ্ট।’

তবে রামনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওবাইদুল কাদের মশিউরের বাবার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সে একটা পাগল, যখন পাগলামি বাড়ে তখন তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। সে এবং তার পরিবারের কেউ আমার কাছে আসেনি।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক এমদাদুল হক প্রামাণিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে তার প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করব। এছাড়াও তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সমাজসেবা অফিস থেকে চেষ্টা করা হবে।

শরিফুল ইসলাম/আরএআর