জয়পুরহাটে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
দলের ত্যাগী, দক্ষ ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়ন বিএনপির 'পকেট কমিটি' গঠনের প্রতিবাদ ও তা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এ সময় তারা ওই কমিটি গঠনের মূল নায়ক হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও থানা পর্যায়ের দুই নেতাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।
সেইসঙ্গে থানা পর্যায়ের নেতার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। শনিবার (২১ মে) বিকেলে রায়কালী স্কুলের সামনে এসব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কর্মসূচিতে ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, দলের ত্যাগী, দক্ষ ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে জেলায় বসে তিন সদস্যের ওই পকেট কমিটি গঠিত হয়েছে।
এ ঘটনায় রায়কালী স্কুলের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। রায়কালী বাজারের সড়ক ঘুরে ওই স্থানে গিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে রায়কালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মতিউর রহমান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম তালুকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সোয়েব, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হান্নান, সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম (সাবেক মেম্বার), ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা তালুকদার, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শরিফ উদ্দিন, বিএনপি নেতা জহুরুল আলম, ইয়াকুব আলী, রফিকুল, ফেরদৌস জোয়ারদারসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
লিখিত বক্তব্যে মো. মতিউর রহমান বলেন, রায়কালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা কেন্দ্রীয় বিএনপি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দৃষ্টিতে আনতে চাই। গত ১৮ মে রায়কালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তাতে দেখা যায় বিগত দিনে মামলা-হামলার স্বীকার, ত্যাগী, দক্ষ, ও রাজপথের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে।
আক্কেলপুর আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে আহ্বায়ক জনাব জামসেদ আলমকে নিয়ে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তিনি আক্কেলপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন না এবং পরবর্তীতে দলের প্রথম সভা বা কোনো কার্যক্রম করতে পারেন নাই।
হঠাৎ করে জামসেদ আলম ও বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান জয়পুরহাট জেলায় বসে জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কের হস্তক্ষেপে আমাদের ইউনিয়নে একটি পকেট কমিটি গঠন করেন। এতে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে একপেশে পকেট কমিটি দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এই পকেট কমিটি প্রত্যাখান ও বাতিলের জোর দাবি করছি।
এক তরফা এই পকেট কমিটি প্রদানের মূল নায়ক কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ওবায়দুর রহমান চন্দনের সাথে সাক্ষাৎ না করলে বা তার আনুগত্য প্রকাশ না করলে কেউ কোনো পদ-পদবি পাবে না। এ কারণে দলের মধ্যে বিভেদ ও গ্রুপিং প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে। দলের জন্য ক্ষতিকর ওবায়দুর রহমান চন্দনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করছি এবং এই পকেট কমিটি গঠনের হোতা আক্কেলপুর থানা কমিটির আহ্বায়ক জামসেদ আলমকেও অবাঞ্চিত ঘোষণা করছি।
সেই সাথে দলের এই দুঃসময়ে ত্যাগী, দক্ষ ও পরিক্ষীত নেতাকর্মী দ্বারা ৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটি উপস্থাপন করলাম। এ বিষয়ে জেলা বিএনপি, কেন্দ্রীয় বিএনপি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দ্রুত হস্থক্ষেপ কামনা করেন তিনি। পরে সেখানে জামসেদ আলমের কুশপুতুল দাহ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে আক্কেলপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক জামসেদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, রায়কালী ইউনিয়ন বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে একজন আহ্বায়ক ও দুইজন যুগ্ম আহ্বায়ক। ওই কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তারা বহুদিন ধরে ওই ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা তাদেরকেই কমিটিতে স্থান দিয়েছি। ওই কমিটির স্থান পাওয়া তিনজন হলেন, আহ্বায়ক মো. নুরুজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোশারফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম। আমাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ঠিক না।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ওবায়দুর রহমান চন্দন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৬০-৬২টি থানা-পৌরসভা কমিটি রয়েছে। আমি ওই কমিটির বিষয়ে জানি না। এটি জেলা কমিটি বলতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে জয়পুরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামসুল হককে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার ৩২টি ইউনিয়নে নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। যারা এসব কাজ করছে তারা দলকে বিতর্কিত করছে। তারা দলের ভালো চায় না। তারা বিএনপির শোভাকাঙ্খি নয়। তারা সঠিক পথে এসে রাজনীতি করুক। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নেই। বিশেষ একটা পক্ষ তাদের দিয়ে এসব করাচ্ছেন।
চম্পক কুমার/আরআই