পি কে হালদারের পৈতৃক ভিটায় পড়ে আছে একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘর
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চাঞ্চল্যকর হাজার কোটি টাকা লোপাট মামলার মূল অভিযুক্ত ও পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার)। তাকে গ্রেপ্তারের পর থেকে তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, পি কে হালদারের বাবা মৃত প্রণবেন্দু হালদার ছিলেন দিঘিরজান গ্রামের একজন সাধারণ দর্জি। মা লীলাবতি হালদার ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্বামীর মৃত্যুর পর (২০ বছর আগে) লীলাবতী হালদার ফসলের ক্ষেত ও বসতবাড়ি বিক্রি করে ভারতে চলে যান।
বিজ্ঞাপন
পি কে হালদারের পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বসতবাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে জন্ম নিয়েছে আগাছা আর শেওলা। পেছনের দিকে থাকা টিনের রান্নাঘরটিও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
পি কে হালদার দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন । তিনি ও তার ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার দুজনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে দুজনই আইবিএ থেকে এমবিএ করেন। পি কে হালদার পাশাপাশি চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (সিএফএ) সম্পন্ন করেন।
শিক্ষা জীবন শেষে পি কে হালদার যোগ দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসিতে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত সেখানে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পরিচালক ছিলেন। ১০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৯ সালে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হয়ে যান। এরপর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন।
পি কে হালদারের মামা শশোধর ব্যাপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০০২- ২০০৩ সালের দিকে প্রশান্ত একবার বাড়িতে এসেছিল। বসতঘর আর ফসলের জমি বেচে দিয়ে ওই সময়ে তার মা ভারতে চলে যায়। সেই সময় তার সঙ্গে শেষ দেখা হয়। বিদেশে প্রচুর সম্পদ গড়লেও গ্রামে কোনো সম্পদ নেই তার।
দিঘীরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মনিন্দ্য মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওরা আমার ছাত্র ছিল। ছোটবেলা থেকেই দেখছি, ওরা তিন ভাইই তুখোড় মেধাবী ছিল। প্রশান্তের অর্থ লোপাটের ঘটনায় আমি হতভম্ব। ওকে যখন দেখতাম, তখন ভাবিনি ভবিষ্যতে ও এমন কাজ করবে।
সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের আগেও নানা কারণে স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনায় আছেন পি কে হালদার। পি কে হালদারের চাচাত ভাইয়ের ছেলে সিদ্ধার্থ হালদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৫-১৬ বছর আগে তিনি এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেন বলে গ্রামে প্রচার রয়েছে। তার জীবনযাপন রহস্যজনক ছিল। ভিন্ন ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করায় তিনি ধর্মত্যাগী হয়েছেন বলেও খবর ছড়িয়েছিল।
প্রসঙ্গত, সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদারের অর্থ লোপাট সিন্ডিকেটের সদস্যদের একটি অংশ তার মতোই সাধারণ পরিবার থেকে আসা। দুদকের হাতে গ্রেপ্তার তার তিন সহযোগী অবন্তিকা বড়াল, সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধার বাড়িও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের বাকসি গ্রামে। সুকুমার মৃধার বাবা ছিলেন গ্রাম্য চৌকিদার। এছাড়া পি কে হালদারের সহযোগী ও বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল কেয়ার গ্রামের বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমতলা গ্রামে। পিরোজপুর শহরের খুমুরিয়া এলাকায় তাদের একটি বাড়ি রয়েছে। অবন্তিকার বাবা ছিলেন পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রভাষক প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা অরুণ কুমার বড়াল।
আবীর হাসান/এসপি