টিটিই শফিকুল বললেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’
সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন রেলওয়ের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম। রোববার (৮ মে) দুপুরে তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে স্বপদে বহাল রাখা হয়েছে।
বিকেলে টিটিই শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য আলহামদুল্লিাহ। তবে আমি এখনো কোনো চিঠি পাইনি। কাজে যোগদানের জন্য আবেদন করেছি। যেহেতু বিষয়টির এখনো তদন্ত চলছে, সেজন্য হয়তো এখনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, কাজে যোগাদের পর আমি যথারীতি কাজ করতে থাকব। আমি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। রেলওয়ের রাজস্ব আদায়ে টিটিই হিসেবে যতটুকু করা যায় ততই করব ইনশাআল্লাহ
এর আগে দুপুরে পাবনার পাকশীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার (ডিসিও) কার্যালয়ে তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শফিকুল ইসলাম।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ব পালন করার জন্য যখন আমি স্টেশনে আসি, ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গাড়ি (ট্রেন) আসার পরে আমাকে জানানো হয়, এসিও (সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম) স্যারের অনুরোধক্রমে তিনজন যাত্রী উঠেছেন। তারা এসি কেবিন যেটা ফাঁকা আছে সেখানে উঠেছেন। তখন আমি বললাম যে- তাহলে কি এসিও স্যারকে ফোন করে আমি জেনে নেবো যে তারা কীভাবে যাবে? যেহেতু তারা বলেছে বিনা টিকিটের যাত্রী। আমি তখন এসিও স্যারকে ফোন দিই। তখন স্যার বলেন- হ্যাঁ রেলমন্ত্রী মহোদয়ের আত্মীয় আছে তিনজন, ওরা এসি রুমের কেবিনে যাবে। আমি তখন বলেছি- স্যার আসলে তাদের তো কোনো টিকিট-মিকিট নাই, তাহলে কি করি? তখন স্যার বলেন- তাহলে তাদেরকে সাধারণ মানের যে টিকিট আছে ওটা করে দিয়েন। তারপর যাত্রীদের সঙ্গে আমার কোনো সাক্ষাৎ বা কোনো কিছুই হয়নি। ট্রেনের গার্ডরাও আমাকে কোনো ইনফরমেশন দেননি যে তারা ফ্রি যাবেন কিনা বা এ রকম কিছু। হয়তো স্যারের সঙ্গে তাদের (গার্ড) কথা হতে পারে, কিন্তু আমার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তারপর যথারীতি গাড়ি (ট্রেন) চালু হলে আমি চেকিং শুরু করি।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রেনে চেকিং শুরু করার সময় ট্রেনের অপারেটরকে জিজ্ঞেস করলাম- কোন কেবিনে তারা (মন্ত্রীর আত্মীয়) আছেন? আমাকে দেখানোর পর আমি সেখানে যাই। আমি তাদেরকে (যাত্রীদের) সম্মানের সঙ্গে বললাম- আপনাদের তো মনে হয় কোনো টিকিট-মিকিট নাই। আমাকে এসিও স্যার যেহেতু বলেছেন, তাই আপনাদের নরমাল রুমের যে ভাড়াটা, সেটা দিন। আমি টিকিটের ব্যবস্থা করে দিই। তখন তারা বললেন- কত টাকা ভাড়া? আমি বললাম- তিনজনের জনপ্রতি ৩৫০ টাকা হারে ১ হাজার ৫০ টাকা। এ সময় তারা ১ হাজার টাকার একটা নোট এবং ৫০ টাকার একটা নোট বের করে দিলেন। এর মাঝে আমি তাদের একটা উপদেশ দিয়েছিলাম যে- কেবিনের নিচেরটা পেড়ে নিন তাহলে আপনাদের ঘুমাতে সুবিধা হবে। কিন্তু এ সময় তারা কোন কথা বললেন না। আমি তাদের ভাড়া আদায়ের রশিদ দিয়ে চলে গেছি। এছাড়া তাদের সঙ্গে আমার আর কোনো কথাবার্তা হয়নি।
মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় পাওয়ার পরও তাদের জরিমানা করেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে টিটিই শফিকুল ইসলাম বলেন, হ্যাঁ, বাড়তি ভাড়ার টিকিট ছাড়া আমি যেহেতু টিকিট ইস্যু করতে পারি না, তাই তাদেরকে জরিমানাসহ টিকিট দিয়েছি। ঈশ্বরদীর থেকে ঢাকার কাউন্টার ভাড়া ২৯৫ টাকা, জরিমানাসহ জনপ্রতি ৩৫০ টাকা করে ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়েছি।
তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওপরওয়ালাকে (আল্লাহ) সাক্ষী রেখে বলছি- আমার সঙ্গে তাদের এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তারা কী কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিল আমি সেটা জানি না, বলতেও পারব না।
এদিন সকাল ১০টা থেকে রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার (ডিসিও) কার্যালয়ে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়। তদন্ত কমিটি তলবের ফলে এদিন ডিসিও কার্যালয়ে হাজির হোন টিটিই শফিকুল ইসলাম, গার্ড ও বিনা টিকিটধারী তিন ট্রেনযাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা। শুরুতেই পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন ও ভুক্তভোগী টিটিই শফিকুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়া হয়। এরপরই নিজ ক্ষমতাবলে টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল করেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক শাহিদুল ইসলাম।
এর আগে শনিবার (৭ মে) ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামকে প্রধান এবং সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ডেন্ট (এসিআরএনবি) আবু হেনা মোস্তফা কামালকে সদস্য করা হয়।
এর আগে গত শুক্রবার (৬ মে) রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করায় তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষককে (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) দিবাগত রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকিটে এসি রুমে উঠেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে তিন যাত্রী। মাঝপথে তাদের বিনা টিকিটে রেলভ্রমণের দায়ে জরিমানা করে সাময়িক বরখাস্ত হন ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম। এ নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।
রাকিব হাসনাত/আরএআর