দুপাশে নেই সংযোগ সড়ক, সেতুর ওপরে বসবাস স্থানীয়দের
২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ৩৮ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে হাবিব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটির নির্মাণকাজ করে। কিন্তু দুপাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি নির্মাণের পর থেকেই স্থানীয় লোকজন ও যানবাহন চলাচলে কোনো কাজে আসেনি। ফলে সেতুর ওপর টিনের ঘর তৈরি করে গত ৪ বছর ধরে সেখানে বাস করছেন স্থানীয়রা।
নেত্রকোণার হাওর উপজেলা খালিয়াজুরীর চাকুয়া ইউনিয়নের ফরিদপুর এলাকায় জলমহালসংলগ্ন খালের ওপর গেলে দেখা মিলবে এ সেতুটির।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লেপসিয়া বাজার থেকে ফরিদপুর হয়ে জগন্নাথপুর পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার মাটির ডুবো সড়ক রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়ক দিয়ে শুকনো মৌসুমে প্রতিদিন লেপসিয়া, ফতুয়া, ফরিদপুর, রাশিদপুর, চাকুয়া, জগন্নাথপুরসহ আশপাশের অন্তত ১২টি গ্রামের ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ চলাচল করেন। আর এলাকাবাসীর যাতায়াতের সুবিধার জন্যই লেপসিয়া-জগন্নাথপুর সড়কের ফরিদপুর এলাকায় জলমহালসংলগ্ন খালের ওপর একটি উঁচু সেতু নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় ফরিদপুর গ্রামের বাসিন্দা মাজহারুল ইসলামসহ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় এমপি রেবেকা মমিন এ সেতুটি নির্মাণের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু সেতু নির্মাণ হলেও সেটা আমাদের কোনো কাজে আসছে না।
ফরিদপুর গ্রামের বাসিন্দা কলেজ ছাত্র তরিকুল মিয়া বলেন, সেতুটি নির্মাণের পর থেকে মানুষ ও যানবাহন চলাচলে কাজে না এলেও সেতুর ওপর ঘর তৈরি করে সেখানে বসবাস করে গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় লোকজন জলমহাল পাহারার কাজ চালাচ্ছেন। তিনি সরকারের লাখ লাখ টাকা খরচ করে নির্মিত সেতুটির দুপাশে অবিলম্বে সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে কথা হলে স্থানীয় চাকুয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেতুটির ওপর প্রায় ৪ বছর ধরে জলমহালের লোকজন ঘর করে মাছ পাহারা দিয়ে আসছেন। সংযোগ সড়কের জন্য কয়েকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক হলে ওই রাস্তা দিয়ে ইজিবাইক, সিএনজিসহ ছোট যানবাহন সহজেই চলাচল করতে পারবে। মানুষের কষ্টও লাঘব হবে।
সেতুর ওপর ঘর তৈরি করেছেন ফরিদপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আবু সিদ্দিক। তিনি বলেন, সেতুটি নির্মাণের পর থেকেই অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। তাই কয়েক বছর আগে সেতুর ওপর একটি টিনের ঘর বানিয়ে জলমহাল পাহারার কাজে লাগাচ্ছি। যদি দুই পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয় তবে সঙ্গে সঙ্গে ঘরটি ভেঙে নিয়ে যাব।
এ বিষয়ে খালিয়াজুরী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব আহমেদ বলেন, কিছুদিন পর হাওরে পানি বেড়ে রাস্তাটি ডুবে যাবে। তাই আগামী শুকনো মৌসুমে সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক তৈরি করার পরিকল্পনা আছে।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা ওই সেতুটির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জিয়াউর রহমান/আরআই