পাবনায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ গান, ৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভিনদেশি ‘কাঁচা বাদাম’ গানে ছাত্রীদের উদ্যাম নাচের ঘটনায় পাবনার ঈশ্বরদীর মানিকনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এতে প্রধান শিক্ষকসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠিয়েছেন পাবনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মোসলেম উদ্দীন। তিনি জানান, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনার পর মানিকনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান, সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক উম্মে হাবিবা সুলতানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
গত ১৮ এপ্রিল পাবনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক চিঠিটির অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী, ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ঈশ্বরদী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মানিকনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস কপি বরাবর পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকীতে মানিকনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও ভাবগাম্ভীর্য-পরিপন্থী গান পরিবেশন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটির প্রচার কাণ্ডজ্ঞানহীন ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করেছে, যা মোটেও কাম্য নয়। একটি প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে প্রধান শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান, সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক উম্মে হাবিবা সুলতানা, লাইভ প্রচারকারী শিক্ষক সোলায়মান আয়োজিত অনুষ্ঠানে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও ভাবগাম্ভীর্য-পরিপন্থী গান অনুষ্ঠান পরিবেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, যা নৈতিকতা আদর্শিক ও শৃঙ্খলার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম উল্লিখিত ঘটনায় সম্পৃক্ততার জন্য গত ২৩ শে মার্চ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। নির্দেশনা হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান, সিনিয়র শিক্ষক উম্মে হাবিবা সুলতানা ও সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলামের দায়িত্ব অবহেলা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাদের বিরুদ্ধে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো। আর লাইভ প্রচারকারী শিক্ষক সোলায়মানকে সতর্ক করে দিয়ে তিরস্কার করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের জাতীয় কর্মসূচিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে পরামর্শ প্রদানও করা হয়েছে ওই চিঠিতে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে উপজেলা সলিমপুরের 'মানিকনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়' নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘কাচা বাদাম’ ও ‘হিন্দি গানের’ সঙ্গে নেচে-গেয়ে জন্মদিন পালন করে। এ সময় বিদ্যালয়ের নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ করা হলে তা দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি ভাইরাল হওয়ায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমালোচনার মধ্যে পড়ে। স্থানীয়রা ফেসবুকে নানা ধরনের মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই পেজটি থেকে ভিডিও ডিলিট করে দেয়।
তবে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এলে গত ২১ মার্চ প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে লিখিত জবাব দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান। ক্ষমা চেয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, তার অনুপস্থিতে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সহকারী শিক্ষক মঞ্চে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছেন।
তার লিখিত জবাবের পর পাবনা জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গত বুধবার (২৩ মার্চ) বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রফিকুল ইসলাম রিপনকে সাময়িক বরখাস্ত করতে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নির্দেশ দেন। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পুরো ঘটনার বিষয়ে তদন্তে করা হয় কমিটি। গত ২৭ মার্চ পাবনা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে মানিকনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে যায় তদন্ত কমিটি। প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে চলা এ তদন্তে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের জবানবন্দি নেওয়া হয়। এতে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা মেলে। তদন্ত শেষে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠায় কমিটি। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেও দোষীদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ এলে।
রাকিব হাসনাত/এনএ