আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিত করাসহ বিদেশে রপ্তানির দাবি জানিয়েছে রংপুরের আলুচাষিরা। দাবি আদায়ে মহাসড়কে আলু ফেলে প্রতিবাদ জানান তারা। এ সময় রংপুর-কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ সাতমাথা মহাসড়কে এই কর্মসূচি পালন করে চাষিরা।

এ সময় প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সড়কে আলু ফেলে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান চাষিরা। পরে পুলিশ এসে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।

আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া বৃদ্ধিসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার কেজিপ্রতি আলু উৎপাদনে ১১ থেকে ১৩ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ মাঠ পর্যায়ে আলু বিক্রি হচ্ছে আট থেকে নয় টাকা কেজি। এতে তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন। বিদেশে পর্যাপ্ত আলু রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হলে এই লোকসান থেকে কিছুটা হলেও রেহাই মিলবে বলে দাবি তাদের।

পীরগাছার কল্যাণী এলাকার আলুচাষি মোবারক হোসেন বলেন, সোগ কিছুর দাম বাড়ে। খালি হামার মতো চাষির দাম বাড়ে না। প্রত্যেক বছর হামরা কষ্ট করি আলু আবাদ করি, কিন্তু বেচাবার সময় দাম মিলে না। এইভাবে চলতে থাকলে আলুর আবাদ কমতে কমতে এক সময় বন্ধ হয়্যা যাইবে।

মাহিগঞ্জ আমতলী এলাকার আলু ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, এখনো রংপুর থেকে পর্যাপ্ত আলু বিদেশে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ধীর গতিতে আলু বিক্রি হচ্ছে। এখন আলুর যে বাজারদর এতে চাষি-ব্যবসায়ী কেউই লাভের মুখ দেখবে না। প্রত্যেক বছর আলু আবাদের পর লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারের সহায়তা চাই।

রংপুর নগরের মডার্ণ ধর্মদাস এলাকার আলুচাষি সোহেল রানা বলেন, রংপুরে আলু ফলন বরাবরই বেশি হয়। উৎপাদন ভালো হলেও দামের বেলায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার বিদেশে আলু রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু এলাকা থেকে আলু বিদেশে যেতেও শুরু হয়েছে। কিন্তু এখন দামের যে পরিস্থিতি তাতে বেশি করে বিদেশে আলু রপ্তানি করা উচিত। এটা হলে লোকসান থেকে আমরা রক্ষা পাব।

সড়কে আলু ফেলে প্রতিবাদ জানানোর সময় রংপুর নগরসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার চাষি ও ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে মাহিগঞ্জ এলাকায় বিক্ষোভ করেন।

এদিকে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আকমল হোসেন জানান, এবার রংপুর জেলায় রেকর্ড ৫১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেশি। তবে রংপুরে যে আলু চাষবাদ হয়, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে এ আলুর চাহিদা নেই। কারণ আমাদের উৎপাদিত আলুর বেশির ভাগ আকারে ছোট।

এ কারণে আমরা উন্নত জাতের বীজ সরবারহ এবং কৃষকদের প্রশিক্ষিত করে এবার বিদেশে আলু রপ্তানি শুরু করতে সক্ষম হয়েছি। এখন যেভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে আলু কেনার চাহিদা বাড়ছে, তাতে করে এবার রংপুর থেকে আলু রপ্তানির পরিমাণ ৫০ হাজার টনের কাছাকাছি পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।  

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, সারা দেশে চাহিদার ২৫ ভাগ আলুর জোগান দেয় রংপুর বিভাগ। তাই রংপুর বিভাগ থেকে আলু রপ্তানির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে সরকার। বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ১০টি দেশে রংপুরের আলু রপ্তানি হচ্ছে।

বিদেশিদের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে উত্তম পদ্ধতিতে রংপুরে উন্নত আলুর চাষাবাদ করা হচ্ছে। দেশের উদ্বৃত্ত প্রতিটি ফসল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই