দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে গত এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। প্রতিদিন ব্যাপকহারে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ চার উপজেলার সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। সপ্তাহজুড়ে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে বেডের অভাবে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। 

সোমবার (২৫ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। 

জানা যায়, আবহাওয়া ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই জেলার ৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও প্রধান চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে শিশুদের বেড রয়েছে মাত্র ১৬টি। কিন্তু প্রতিদিনি এখানে তার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হচ্ছে। ফলে বেডের অভাবে হাসপাতালের মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছে হচ্ছে রোগীদের।

পুরো পঞ্চগড়ে একজন মাত্র শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে হিমসিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তবে বাকি ৪টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। সময় মতো চিকিৎসক ও নার্সদের না পাওয়ার অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের।

এ ছাড়া বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। চিকিৎসা ভালো না পেয়ে অনেকেই পার্শ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষে বলছে ২৫০ শয্যা নির্মাণাধীন ভবনের কাজ শেষের দিকে। ওই ভবনের কাজ শেষ হলে সেবার মান আরও বাড়বে।  

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চলতি মাসে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ জন শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর গত মার্চ মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৯৫ জন।  

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ফারুক হোসেন বলেন, হঠাৎ আমার মেয়ের ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা ও বমি। বাড়িতে চিকিৎসা করিয়েছি কিন্তু সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে আসছি। এখন আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ। 

সদর উপজেলার বসিরুল আলম বলেন, আমার মেয়ের হঠাৎ বমি ও পাতলা পায়খানা। এ কারণে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্ত হাসপাতালে পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছি  না। চিকিৎসকের দেখা নেই, নার্স ভর্তি কিন্তু তারা ক্যানোলা করতে পারে না। এ কারণে বাইরে থেকে ক্যানোলা করে নিয়ে আসলাম। 

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গরম-ঠান্ডা মিলে আবহাওয়ার যে বিরুপ প্রভাব তৈরি হয়েছে তা শিশুরা ধারণ করতে পারছে না। এ ছাড়া খাদ্যাভ্যাস একটি বড় বিষয়। রমজানে মানুষ তেলে ভাজা ইফতারসামগ্রী খাচ্ছে এসব নানা কারণেই পেটের পীড়া দেখা দিচ্ছে। 

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কাওসার আহমেদ বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ শেষ হলে রোগীরা আরও বেশি সেবা পাবেন। 

আরআই