সড়কের এক পাশে খাল, অন্য পাশে দীঘি। খাল ও দীঘি ভাঙতে ভাঙতে সড়কটি এখন দেড় থেকে দুই ফুটে ঠেকেছে। বর্ষাকালে সড়কটি হয়ে ওঠে আরও ভয়ানক। পা পিছলে খালের পানিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে শিক্ষার্থীদের। এই ভয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে চাচ্ছেন না। এতে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। চিত্রটি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পূর্ব জামিরতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। 

এদিকে সড়কটি সংস্কারের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু দেড় বছরেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কাছে রাস্তা সংস্কারের বরাদ্দ নেই। উপজেলা প্রশাসন নিশ্চুপও। কোনো সাড়া শব্দ নেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে রোববার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা পোস্ট প্রতিনিধি জেলা প্রশাসক (ডিসি), ইউএনও ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ছুটে যায়। জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রথমে তার কাছে আবেদন করতে হবে। তাহলেই তিনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

ইউএনও ইমরান হোসেন জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন। পরে ক্যামেরায় সাংবাদিকদের বক্তব্য দেবেন। আর এটিও শহিদুল ইসলাম জানান, তাদের কাছে কোনো বরাদ্দ নেই। তারা তাকিয়ে আছেন জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দিকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দিঘলী ইউনিয়নের পশ্চিম জামিরতলী থেকে রাজাপুর সড়কের পূর্ব জামিরতলী সংযোগ সেতু থেকে প্রায় ৪০০ ফুট দক্ষিণে বিদ্যালয়টির অবস্থান। সেতুটি ঘেঁষেই সড়কটি। সড়কের দুপাশে মাটি নেই। খাল ও দিঘীতে বিলীন হয়ে সড়কটি এখন দেড় থেকে দুই ফুটে ঠেকেছে। মনে হচ্ছে ফসলি ক্ষেতের আইল। 

এদিকে ঘনিয়ে আসছে বর্ষাকাল। ঈদের ছুটি শেষেই আবার বিদ্যালয়ে পাঠদান চালু হবে। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কটি কাদামাটিতে পিচ্ছিল হয়ে পড়বে। এতে সড়ক দিয়ে চলাচলে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। খাল কিংবা দিঘীর পানিতে পড়ে মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটার আশঙ্কা করছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বর্ষায় রাস্তার দুপাশে খাল ও দিঘীতে প্রচুর পানি থাকে। এতে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সময় তাদের মনে ভয় কাজ করে। সড়কটি কেউ ঠিক করে দিলে, ভয়হীনভাবে তারা বিদ্যালয়ে যেতে পারবে।

স্থানীয় বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন ও নুর হোসেন জানায়, রাস্তাটির এক পাশ খালে, অন্য পাশ দিঘীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দিঘী বাঁচানোর জন্য দুপাশে বাঁশ রোপণ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। ভাঙতে ভাঙতে সড়কটি ফসলি মাঠের আইলে (প্রায় দেড় ফুট) পরিণত হয়েছে। বর্ষার বৃষ্টিতে সড়কটি পিচ্ছিল হয়ে থাকে। শিশু শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই সাঁতার জানে না। পা পিছলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলতাফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের একটি বাড়ির ওপর দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বাড়ি বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে। এতে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে সরু রাস্তাটি ব্যবহার করে। দুর্ঘটনার শঙ্কায় আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি। অভিভাবকরা এখন স্কুলে শিশুদের ভর্তি করাতে চাচ্ছেন না। এজন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল আসেনি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভপতি মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রধান রাস্তাটি খাল ও দিঘীর ভাঙনে সরু হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। রাস্তাটি সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু দেড় বছরেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা হলে বিদ্যালয়ে আসতে শিক্ষার্থীদের আর কোনো ঝুঁকি থাকবে না।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন জানান, সড়কটির কাজে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া সম্ভব নয়। এ কাজে বড় বাজেট দরকার। জেলা বা উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দিলে সড়কের সমস্যা সমাধান করা যাবে।

ক্যামেরার সামনে বক্তব্য না দিলেও ভিডিও দেখে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, নিরাপত্তা দেয়াল (গাইড ওয়াল) করে সড়কটি সংস্কার করতে হবে। তবে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থল পরির্দশন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আবেদন করতে হবে। আর না হয় আপনি (প্রতিবেদক) আমার হোয়াটসঅ্যাপে তথ্যটি দেন। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসপি