রোগীর দুই স্বজনকে পিটিয়ে আটকে রাখলেন হাসপাতালের স্টাফরা
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নবজাতককে দেখতে চাওয়ায় দুই স্বজনকে মারধর করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে আনসার সদস্য ও স্টাফদের বিরুদ্ধে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রকল্পে কর্মরত মেহেদী হাসান, আনসার সদস্য অভিষেক মজুমদার ও কালাম মুন্সীসহ ৬-৭ জন মিলে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
মারধরের শিকার আশরাফুজ্জামান মুন্না বলেন, আমার ভায়রার নবজাতকের নাভিতে সমস্যা হওয়ায় স্বরূপকাঠি থেকে বরিশালে রেফার্ড করা হয়। বিকেল ৩টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে শিশুটিকে ভর্তি করা হয়। আমি ও আমার শ্যালক রাসেল সাড়ে ৪টার দিকে নবজাতক ওয়ার্ডের সামনে এসে দাঁড়াই। আমি ওয়ার্ডের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের কাছে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি করে বাইরে বের করে দেন। আমি স্বীকারও করেছি, বলেছি ‘ভাই ভুল হয়েছে হয়তো, আমি হাসপাতালের নিয়ম জানি না’। কিন্তু সেই গার্ড আমার কোনো কথা না শুনে আমাকে মারধর শুরু করেন। আমরা কোনো দোষ করিনি, তারপরও মাফ চেয়েছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা? ইচ্ছেমতো মার দিল..।
মারধরের শিকার হওয়া আরেকজন রাসেল হাওলাদার বলেন, হাসপাতালের স্টাফ মেহেদী ও কয়েকজন আনসার সদস্য দুলাভাইকে মারধর শুরু করেন। আমি ঠেকাতে গেলে স্টাফ মেহেদী ও আনসার সদস্যরা আমাকেও মারধর করে আটকে রাখেন। হামলাকারীরা বলেছেন আমাদের রোগীকেও চিকিৎসা দেবে না। এ ঘটনায় আমরা আতঙ্কে আছি।
তিনি বলেন, তারা ভর্তির কাগজ নিয়ে আটকে রাখে। পরে প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা ভর্তির কাগজ ফেরত দেয় এবং আমাদের ছেড়ে দেয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তফসের আলী নামে এক বৃদ্ধ বলেন, দেখলাম দুজনে কথা বলছিল। এর মধ্যে হাসপাতালের স্টাফ ও আনসার সদস্যরা মিলে দুজনকে মারধর শুরু করে। পরে তাদের আটকেও রাখে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক শিশুর বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৭ এপ্রিল আমার সন্তানকে এখানে এনে ভর্তি করেছি। ওইদিন ওয়ার্ডে ঢুকিয়ে দেওয়ার পর আর সন্তানকে দেখতে পারিনি। আমি আজও হাসপাতালের স্টাফদের অনেক অনুনয় করে বলেছি, আমি একটু আমার সন্তানকে দেখতে চাই। তারা আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে। স্টাফরা বলেন- ভেতরে একজন ঢুকতে পারবে। তাই বলে আমি বাবা হয়েও একনজর দেখতে পারব না?
রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আজ দুইজনকে মারধর করে আটকে রেখেছে স্টাফ ও আনসাররা। আমি তখন প্রতিবাদ করায় আমাকেও লাঞ্ছিত করেছে। আমাকে বলেছে আমার সন্তানের চিকিৎসা দেবে না।
ইউনিসেফ প্রকল্পে হাসপাতালে কর্মরত অভিযুক্ত মেহেদী হাসান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নবজাতক ওয়ার্ডের গেটের কাছে আমি দায়িত্ব পালন করছিলাম। তখন দুজন এসে আমার ওপর এবং ওয়ার্ড ক্লিনারের ওপর হামলা চালায়। তারা হাসপাতালের স্টাফের গায়ে হাত তোলায় তাদের আটকে রাখা হয়েছে।
অভিযুক্ত আনসার সদস্য অভিষেক মুজমদার বলেন, হাসপাতালের স্টাফরা অভিযোগ দিয়েছেন তাদের ওপর হামলা হয়েছে। এ কারণে রাসেল ও মুন্না নামে দুজনকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তারা এখান থেকে তাদের রোগী নিয়ে যাবেন, অন্যথায় তাদের রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে না।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আনসার কমান্ডার মোশারফ হাসেন বলেন, আনসার সদস্যরা কাউকে মারধর করেনি। মূলত রোগীর স্বজনরা নিয়ম লঙ্ঘন করে নবজাতক ওয়ার্ডে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তাদের বাধা দিলে তারা হাসপাতালের স্টাফদের মারধর করেন। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নার্সরা আমাকে জানান। আমি সেখানে আনসার সদস্যদের পাঠাই। তারা রোগীর স্বজনদের নিবৃত করার চেষ্টা করেছেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মনিরুজ্জামান শাহীন জানান, ঘটনাটি পুরোপুরি তিনি জানেন না। খবর নিয়ে দেখবেন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগীর স্বজনদের মারধরের খবর পেয়েছি। আমি তাৎক্ষণিকভাবে সেই নবজাতক রোগীর সার্বিক চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি রোগীর স্বজনদের বলেছি লিখিত অভিযোগ দিতে। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযুক্ত স্টাফ ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর