খুলনায় নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংক থেকে আব্দুল্লাহ (৭) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকালে নির্মাণাধীন খালিশপুর সুপার মার্কেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।

নিহত আবদুল্লাহ খালিশপুর সুপার মার্কেট এলাকার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আবুল কালাম হাওলাদারের ছেলে।

এর আগে শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ হয় আবদুল্লাহ। তার মৃত্যুর জন্য অরক্ষিত নির্মাণাধীন ভবনের সেপটিক ট্যাংক খোলা রাখাকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, নিহত আব্দুল্লাহ চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। সে স্থানীয় ওব্যাট স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। শুক্রবার বিকেলে ঘর থেকে বের হয় সাত বছরের আব্দুল্লাহ। পার্শ্ববর্তী মসজিদে প্রায়ই সে ইফতারি করত। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও সে আর বাড়ি ফেরেনি। এরপর পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজা শুরু করে। এলাকায় মাইকিংও করা হয়।

শনিবার ভোর ৬টায় এলাকার এক ব্যক্তি ওই ট্যাংকের মুখে আব্দুল্লাহর মরদেহ ভেসে উঠতে দেখে তার বাবাকে খবর দেন। পরে তার বাবা স্থানীয়দের নিয়ে সন্তানের মরদেহ উত্তোলন করেন।

মূলত নির্মাণাধীন খালিশপুর পৌর সুপার মার্কেট অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রায় দুই বছর মার্কেটের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন স্থানে খোলা সেপটিক ট্যাংক রয়েছে। বাচ্চাটির মৃত্যুর জন্য এলাকাবাসী মার্কেট নির্মাণ কর্তৃপক্ষের অবহেলাকেই দায়ী করছেন।

মার্কেট এলাকার বাসিন্দা টিপু সুলতান বলেন, মার্কেটের নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রয়েছে। কাজ বন্ধ রয়েছে। মার্কেটের নিচে পানি পড়ে রয়েছে। সেই পানিগুলোও যদি ফেলে দিত, তাহলে দুর্ঘটনা ঘটত না।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সিটি করপোরেশন আর ঠিকাদার। মার্কেটের কাজ বন্ধ থাকায় অসামাজিক কাজ হয়, রাতে ছিনতাই হয়। মার্কেট না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী চলে গেছে। তিন-চার বছরেও এই কাজ শেষ হয়নি। সেপটিক ট্যাংক রক্ষিত থাকলে প্রাণ দিতে হতো না আবদুল্লাহকে।

এদিকে আদরের সন্তান হারিয়ে আব্দুল্লাহর মা পাগলপ্রায়।

নিহতের মা লাভলী বেগম বলেন, জুমার নামাজ পড়েছে। আসরের পরে এসে ভাত চাইলে পান্তা ভাত দিয়েছি, খাইছে। কিছুক্ষণ ঘুরে এসে বলে আম্মু খিদে লাগছে, বললাম ভাত তো ভুট করে রেখেছি। বলল, ৫ টাকা আছে। এরপর বের হয়েছে আমার বাবা আর তো ঘরে ফেরে নাই। বাসায় না আসায় মাইকিং করানো হয়েছে। সারা রাত ঘুম হয়নি। সকালে ৬টায় বাবার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এই বলেই আহাজারি করতে থাকেন তিনি। 

খালিশপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল মান্নান বলেন, একটি শিশু ডুবে মারা গেছে শুনে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক তদন্তে পানিতে ডুবে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

মোহাম্মদ মিলন/এনএ