এবারও ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা
ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আরেক নাম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়ক। এই সড়ক ব্যবহার করে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গসহ ২৬ জেলার মানুষ চলাচল করে। ফলে ঈদে বাড়তি পরিবহনের চাপে পড়ে মহাসড়কটি। বিভিন্ন কারণে এবার ঈদেও যানজটের কবলে পড়তে পারে সড়ক ব্যবহারকারীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক এখনও দুই লেনে রয়েছে। সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ ও কয়েকটি জায়গায় লিঙ্ক রোর্ডের কারণে সেতুর পূর্বপাড়েও যানবাহনের জট সৃৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সেতু কর্তৃপক্ষ খানাখন্দে পাথরকুচি ছিটিয়ে দায় সারছে।
বিজ্ঞাপন
সড়কে পাথরকুচি ছিটানোর ফলে মোটরসাইকেলের চালকরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন। তবে মহাসড়কের এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন প্রকল্পের কাজ সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম অংশ থেকে শুরু হলেও এলেঙ্গা হতে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত কাজ শুরু করা হয়নি। এছাড়া গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে মির্জাপুরের গোড়াই ফ্লাইওভারের কাজ এখনও চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিবারই ঈদ এবং ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে ব্যাপক যানজটের কবলে পড়তে হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়কে চলাচলকারী পরিবহন ও যাত্রীদের। এ সময় বড় পরিবহনের পাশাপাশি ছোট ছোট পরিবহনও বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা। এ ছাড়া অনুমতি ছাড়া ঢাকা মহানগরে চলাচল করা বিভিন্ন রুটের সিটিং সার্ভিসের বাসগুলো উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন জেলায় চলাচল করে। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে মহাসড়কে পরিবহনের চাপ বেড়ে যায় বহুগুণ।
অন্যদিকে মহাসড়কে পরিবহনের বাড়তি চাপ ও যানজটের ফলে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়। আবার টোল আদায়ে ধীরগতি এবং পরিবহনের বাড়তি চাপের কারণে টোল আদায় সিস্টেম বিকল হওয়ার কারণেও সৃষ্টি হয় যানজট।
এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব পর্যন্ত দুই লেনের সড়কে তিনটি লিঙ্ক রোড রয়েছে। এগুলো হলো-এলেঙ্গা থেকে ময়মনসিংহ-জামালপুরগামী, এলেঙ্গা থেকে ভূঞাপুর-তারাকান্দিগামী রোড এবং বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব গোলচত্বর থেকে ভূঞাপুর-তারাকান্দি রোড সড়ক। লিঙ্ক রোডের পরিবহন মহাসড়কে প্রবেশের সময় এক পাশের পরিবহন আটকে রাখা হয়। এতে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সড়কে সৃষ্টি হওয়া খানাখন্দের কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে চালকরা।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ অংশের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ। সিরাজগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুর পাশে নতুন করে আরেকটি সেতু তৈরির কাজও চলমান রয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটিই দিয়ে এখনও যানবাহন চলাচল করছে। এজন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুটি। সড়ক প্রশস্তকরণ ছাড়াও ঝিনাইগাতি লিঙ্করোড, সায়েদাবাদ, মুলিবাড়ী, কড্ডা, ভূইয়াগাতি ও চান্দাইকোনা লিঙ্করোডসহ কয়েকটি এলাকার লিঙ্ক রোডের কারণেও ঈদযাত্রায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
চালক ও ভুক্তভোগীরা জানান, ঢাকা থেকেই আব্দুল্লাহপুর, কোনাবাড়ী হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত যানজটে পড়তে হয়। অন্যদিকে উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত এবং গাবতলী হতে সাভার হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কবলে পড়তে হয়। এরপর গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের সুবিধা পাওয়া যায়। এই মহাসড়কটুকু যানজটমুক্ত হলেও এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার দুই লেনের সড়কে যানজটে পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সৃষ্টি হওয়া এই যানজট গিয়ে ঠেকে চার লেন সড়কে।
এছাড়া সিরাজগঞ্জ অংশে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় সড়কে চাপ বাড়লেই যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে দুই পাড়ের সৃষ্টি হওয়া যানজটের কারণে সেতুতে টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া সড়কে বাড়তি পরিবহনের কারণে সেতুর ওপর ও মহাসড়কে অনেক পরিবহন বিকল হওয়ার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়।
সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এবার মহাসড়কে পরিবহনের চাপ বেশি হলে শুধুমাত্র মোটরসাইকেলের জন্য দুটি টোল বুথ চালু করা হবে। এছাড়া পরিবহন ভেদে আলাদা করা হবে বুথগুলো। এতে দ্রুত চাপ কমানো যায়।
টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, টাঙ্গাইল থেকে কোনো ধরনের ফিটনেসবিহীন গাড়ি ঈদে চলাচল করবে না। সমিতির আওতায়ধীন ফিটনেসবিহীন কোনো পরিবহন নেই। ঈদে মূল যানজটের সৃষ্টি হয় সিরাজগঞ্জ অংশে। হাটিকুমরুল, কড্ডার মোড়, নলকা ব্রিজের কারণে গত বছর যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। যানজট হলে পরিবহনে ব্যবসা হয় না। এছাড়া যানজটের কারণে শিশু, নারীরা ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহাসড়কে যানজট নিরসনে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
মহাসড়ক উন্নতিকরণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার জয়েন্ট ভেঞ্চারের ব্যবস্থাপক এখলাছ উদ্দিন বলেন, আগামী ২৫ এপ্রিল নলকার নতুন সেতুর এক লেন খুলে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের খানাখন্দগুলো সংস্কারের কাজ শেষ করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ বন্ধ রাখা হবে।
জয়দেবপুর-এলেঙ্গা চার লেন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার অমিত কুমার চক্রবর্তী বলেন, মহাসড়কে প্রশস্তকরণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। মির্জাপুরের ফ্লাইওভারটি খুলে দেওয়া হবে। ঈদযাত্রায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আতাউর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে সড়কে সব সময় কাজ করে যাবে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করি এবার ঈদ যাত্রায় মানুষের ভোগান্তি হবে না।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, এবার ঈদে মহাসড়কে যানজট এড়াতে ভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়ক অধিক বিবেচনায় রেখে সেখানে অস্থায়ী রোড ডিভাইডার স্থাপন করা হবে। এবার সড়কে ৭১০ জন পুলিশ সদস্য সব সময় কাজ করবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগেই টাঙ্গাইলের গোড়াই ফ্লাইওভার ও সিরাজগঞ্জের নকলা ব্রিজ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। যাতে ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানজট সহনীয় পর্যায়ে থাকে। যদিও এসব কাজের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। বিশেষ বিবেচনায় ঈদের আগেই খুলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে এসব অংশে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিকল্প রাস্তাগুলোতে যদি গাড়িগুলো ডাইভার্ট করে দেওয়া যায় তাহলে মহাসড়কে ট্রাফিক চাপ কমবে।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রাণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম থাকবে। বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা থাকবে। এছাড়াও মহাসড়কে পুলিশের পক্ষ থেকেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সঙ্গেও আমরা কিছু কিছু বিষয় সমন্বয় করছি। দুই বছরের করোনা পরিস্থিতির পর এবার ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধি পাবে।
এসপি