কাইছার খারাপ কাজ করত, সেটি আমরা জানতাম না
'কাইছার বাইরে কী করত হামরা তেমন জানতাম না, খালি জানি ঢাকাত রিকশা চালায়। কেউ কোটে ওকাম করলে খালি ওর খাওত দোষ দ্যাচলো। প্রায় দিনই কাইছারের খোঁজে পুলিশ রাত-বিরাতে বাড়িত আসত। তকন হামাকরেকও ভয় লাগত। আজ শুনি কাইছার মইরা গেছে। একন থেকে আর পুলিশকে আসতে হবে না।'
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মানিকগঞ্জের সিংগাইরে র্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত কাইছার আলী মন্ডলের খালা হাসনা বেগম (৭০)।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার বিকেলে (২১ এপ্রিল) জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জয়হার গ্রামে কাইছারের বাড়িতে গিয়ে তার খালার এমন বিলাপ দেখা যায়। ভাগিনা কাইছারের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ওই বাড়িতে এসেছিলেন। তার বাড়িও একই গ্রামে।
বুধবার (২১ এপ্রিল) দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রাম ইউনিয়নের আলমমারা এলাকায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্ধুকযুদ্ধে কাইছার আলী মারা যান। তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জয়হার গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তারা পাঁচ ভাই ও তিন বোন। ভাইদের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন কাইছার। তার নামে হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতিসহ ডজনখানেক মামলা আছে।
কাইছারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির উঠানে বসে দুজন নারী কাঁদছিলেন। কিছুক্ষণ পর কয়েক প্রতিবেশী লাশ কখন আসবে, তা ওই দুই নারীর কাছে জানতে চান। লাশ কখন আসবে তারা জানেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন। এরপর সেখানে গ্রামের লোকজন ভিড় করেন। কাইছার যে ঘরে বসবাস করতেন, সেই ঘর বৃষ্টির পানিতে ভেঙে যাওয়ায় প্রথম স্ত্রী শ্বশুরবাড়িতে চলে যান। আর দ্বিতীয় স্ত্রী ঢাকায় বসবাস করেন।
গ্রামবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত কাইছার আলী এলাকায় দুর্ধর্ষপ্রকৃতির ছিলেন। কোথাও চুরি বা ডাকাতি হলে পুলিশ তাকে সন্দেহ করত। প্রায়ই তার খোঁজে পুলিশ বাড়িতে আসত। কাইছারের বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। সাত মাস আগে মারা যান কাইছারের মা আমিনা বেগম। মায়ের মিলাদ করার পর বাড়িতে পুলিশ আসতে পারে বলে তিনি নিরুদ্দেশ হন।
কিন্তু বুধবার দুপুরে কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান স্থানীয় ওয়ার্ড সদসের মাধ্যমে কাইছার আলী মারা যাওয়ার ঘটনাটি তার স্বজনদের জানান।
কাইছারের বড় ভাই বেলাল হোসেন বলেন, কাইছার গ্রামে থাকতে মাছের ব্যবসা ও জমি আবাদ করত। সে বাইরে খারাপ কাজ করত, সেটি আমরা কেউ জানতাম না। তবে কাইছারের খোঁজে বিভিন্ন থানার পুলিশ বাড়িতে আসত। তখন কাইছার পালিয়ে থাকত। কাইছার সাত মাস আগে বাড়ি ছেড়েছে। আমরা মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আজ দুপুরে শুনলাম কাইছার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।
কাইছারের ভাবি জোবেদা ও ভাতিজি জহুরা বলেন, কাইছার দুটি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রী বাপের বাড়িতে থাকে। সেই পক্ষের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। কাইছারের মাটির বাড়ি ঘরের ছাউনি উড়ে গিয়ে ভেঙে গেছে। এখন কাইছারের কেউ বাড়িতে থাকে না। কাইছার ঢাকায় রিকশা চালায় বলে শুনেছিলেন। সে ডাকাতি করত সেটি তারা জানতেন না বলে জানান।
কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিহাদ মন্ডল বলেন, কাইছারকে সাত মাস আগে তার মায়ের মিলাদের সময় গ্রামের লোকজন দেখেছিল। এরপর থেকে আর তাকে কেউ দেখেনি। বৃহস্পতিবার র্যাবের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে নিহতের খবর শুনেছি।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ চন্দ্র দেব বলেন, কাইছার আলী মন্ডল মানিকগঞ্জে সিংগাইরে নিহত হয়েছেন। হত্যা, ধর্ষণ, খুনসহ ডাকাতি, মাদক ও ছিনতাই মিলে পাঁচবিবি থানাতে তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া দেশে অন্যান্য থানায় আরও কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে।
চম্পক কুমার/এনএ