পুরো শহর কোলাহলমুক্ত। একটু পরপর শুধু দু-একজন মানুষের আনাগোনা। জেলা শহরের চৌরাস্তার উত্তর-পশ্চিম কোণে রাত ২টা ১৫ মিনিটে শাক বিক্রি করছেন আজিজুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ। গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে স্বল্প দামে শাক পেয়ে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম। চার সদস্যদের সংসার চলে তার এই আয় দিয়ে। তার পেশা শাক বিক্রি করা। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালান। কিন্তু দিনের শাক বিক্রির আয়েও হিমশিম খান তিনি। তাই শাক নিয়ে রাতের বেলায়ও চৌরাস্তায় বসে পড়েন।

প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা অব্দি বিভিন্ন রকমের শাক বিক্রি করে থাকেন তিনি। সংসার চাহিদা পূরণে তিন বছর ধরে এ কাজ করছেন তিনি।

শাক কিনতে আসা হরিপ্রসাদ বলেন, সারা দিন ব্যস্ততার কারণে বাজার করা সম্ভব হয় না। অনেক রাতে বাসায় যেতে হয়। বাসায় যাওয়ার পথে দেখলাম চাচা শাক বিক্রি করছেন। তাই তার কাছে শাক কিনলাম। রাতের বেলায় শাক কিনতে পাওয়া অনেক কঠিন বিষয়। আর কম দামেও কিনতে পারলাম। এত রাতে উনি যে শাক বিক্রি করছেন, এটি আমাদের জন্য অনেক উপকার হয়। বিশেষ করে আমরা যারা সারা দিন ব্যস্ত থাকি, তাদের।

ক্রেতা মিলন আলী বলেন, রমজান মাসে অনেক রাতে বাসায় ফিরতে হয়। পরিবারের কাঁচা বাজারগুলো সহধর্মিণী নিজেই করেন। বাজারে গিয়ে বাজার করার সুযোগ হয় না। আজিজুল চাচা প্রতি রাতে শাক নিয়ে বসেন। তাই এখান দিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ে যাই। কাজটা অনেক উপকারী। আর এত রাতে উনি সেবা দিচ্ছেন, এটা প্রসংশনীয়।

শাক বিক্রেতা আজিজুল ইসলাম বলেন, অভাবের সংসারে আয় করার মানুষ কম। খাওয়ার মানুষ বেশি। পেশা হিসেবে শাক বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। তবু অভাব ধূর হয় না। দিনে আড়তে শাক বিক্রি করি। তখন লাভ বেশি হয় না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি রাতেও শাক বিক্রি করব। একটু বেশি আয় হলে সংসারটা ভালো চলে।

দিন দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, এমন বাস্তবতা আজিজুলও জানেন। তাই তিনি বলেন, সবকিছুর দাম বাড়লেও শাকের আঁটির দাম বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও জোড়া পাঁচ থেকে আট টাকা। এখনো একই দাম। যেহেতু আলাদা কিছু করতে পারি না, এটাই আমার সম্বল।

করোনার আগ থেকে রাতে শাক বিক্রি করা শুরু করি। দেখা যায় দিনের চেয়ে রাতের বেলায় বেচাকেনা বেশি ও লাভ বেশি হয়। তা দিয়ে আল্লাহর রহমতে সংসার ভালো চলে।

এনএ