চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুন্দিপুর গ্রামে থানায় করা অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে হিজলগাড়ী ক্যাম্প পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ সাতজনকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

তবে পুলিশের দাবি, একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গেলে পুলিশ দেখে অভিযুক্ত পালিয়ে যাওয়ার সময় টিনের সঙ্গে লেগে কপাল কেটে যায়। এতে পরিবারের সদস্যরা রক্ত দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে হোসেন আলীকে ভর্তি রেখে বাকি ছয়জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।

আহতরা হলেন কুন্দিপুর গ্রামের বেলে মাঠাপাড়ার মৃত আব্দুল মান্নানের স্ত্রী জোমেলা খাতুন (৬৫), তার তিন ছেলে ইসরাফিল (৩৪) হোসেন আলী (৪০) ও মুসা করিম (৩০), ইসরাফিলের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা জাকিয়া খাতুন (২২), মুসা করিমের স্ত্রী সাবিনা খাতুন (২৬), হোসেনের স্ত্রী শিউলি খাতুন (২২)।

পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার কুন্দিপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে হোসেন আলীর সঙ্গে একই এলাকার কদম আলীর ছেলে মোস্তফা সঙ্গে ঈদে গরুর মাংসের জন্য করা সমিতির টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত মোস্তফা হোসেন আলীকে অভিযুক্ত করে দর্শনা থানায় একটি অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত করতে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে হিজলগাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মজিবর রহমান কুন্দিপুর গ্রামে যান। তাদের দেখে অভিযুক্ত হোসেন আলী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বাড়ির টিনে হোসেনের কপাল কেটে যায়। রক্ত বের হতে দেখলে পুলিশের ওপর চড়াও হয় পরিবারের লোকজনসহ গ্রামবাসী। একপর্যায়ে হিজলগাড়ী ক্যাম্প পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ফিরে আসেন। তবে কাউকে মারধর করা হয়নি।

আহত হোসেন আলীর মা জোমেলা খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে হিজলগাড়ী ক্যাম্পের দুই পুলিশ সদস্য গ্রামে আসলে আমার ছেলে ভয়ে পালিয়ে যায়। পরে আমার ছেলেকে ধাওয়া করে ধরে বেধড়ক মারধর করে। এতে আমার ছেলের কপাল কেটে রক্তপাত হলে অজ্ঞান হয়ে যায়। খবর পেয়ে হোসেনের স্ত্রীসহ আমরা ঘটনাস্থলে গেলে আমাদের দেখে পুলিশ চলে যায়। পরে দর্শনা থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আসলে আমরা প্রতিবাদ করি। এতে পুলিশ সদস্যরা আমাকে গুলি করারও হুমকি দেয়। পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আমাকেসহ তিন পুত্রবধূ ও আমার তিন ছেলেকে বেধড়ক মারধর করে।

আহত জাকিয়া খাতুন বলেন, আমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমার স্বামীসহ আমি ঘটনাস্থলে যাই। পুলিশ মনে করেছে যে আমরা তাদের ওপর হামলা করতে গিয়েছি। পরে আমার স্বামীকে খুঁজতে আমার ঘরে আসে পুলিশ। ঘরের মধ্যে আমার স্বামীকে ধরে গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। আমি সামনে গেলে বন্দুকের বাঁট দিয়ে আমার পায়ে আঘাত করে এবং ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় পুলিশ সদস্যরা। সেখানে কোনো নারী পুলিশ ছিল না। একজন নারীকে কীভাবে পুরুষ পুলিশ সদস্য মারধর করে? আমরা এর বিচার চাই।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডা. হাসনাত পারভেজ শুভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হোসেন আলীর মাথাসহ চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে তাকে শক্ত কোনো লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পুলিশ কাউকে মারধর করেনি। একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েছিল হিজলগাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে অভিযুক্ত পালানোর সময় কপাল কেটে গেলে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের হাতাহাতি হয়।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ কাউকে মারধর করেনি। পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে যায়, কাউকে মারধর করতে যায় না। হতে পারে আত্মরক্ষার্থে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আগামীকাল (আজ) দর্শনা থানায় উভয়পক্ষকে নিয়ে বসা হবে। যে-ই দোষী হবে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

আফজালুল হক/এনএ