ঝড়-বৃষ্টি হলেই দুলতে থাকে শ্রেণিকক্ষ
বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে দুলতে থাকে টিনশেডের শ্রেণিকক্ষ। মাটির তৈরি জরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষের ওপরের ফুটো চালের ফাঁকফোকর দিয়ে পানি পড়ে। আবার শ্রেণিকক্ষের আসবাবসহ শিক্ষার্থীরা ও তাদের বইপত্র ভিজে যায় বৃষ্টির ফোঁটায়। বর্ষায় ঘর ভাঙার ভয় আর গরমে বিদ্যুৎহীন শ্রেণিকক্ষে অসহ্য ভোগান্তিতে হাঁপিয়ে উঠতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।
এভাবেই বছরের পর বছর ধরে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে চলছে বাসুদেবপুর হাইউল উলুম দাখিল মাদরাসা। ঝুঁকিপূর্ণ এই মাদরাসার অবস্থান দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার অমরপুর ইউনিয়নে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৯৯৮ সালে স্থাপিত মাদরাসাটিতে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০০। তিনটি মাটির ঘর নিয়ে যাত্রা করা মাদরাসাটিতে শুরু হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আরও তিনটি টিনশেডের শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়। টানা কয়েক বছর ধরে পরীক্ষায় শতভাগ পাস। তাতে দিন দিন বাড়তে থাকে শিক্ষার্থী। মাদরাসার উত্তর দিকে পরে তিনটি পাকা শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করে সেখানে চলছে পাঠদান। এরই মধ্যে ২০১৯ সালে মাদরাসাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এমপিওভুক্ত করা হয়।
এবার ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা হয় দ্বিগুণ। কিন্তু বিপত্তি বেধেছে শ্রেণিকক্ষ সংকট নিয়ে। ঝুঁকিপূর্ণ মাটির ঘরে ক্লাস করতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। জরাজীর্ণ মাটির ঘর আর ফুটো টিনশেডের ঘরগুলো এখন ক্লাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে শ্রেণিকক্ষে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের বইখাতা ভিজে যায়। কখনো কখনো শিক্ষার্থীরাও ভিজে যায়।
মাদরাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলে, আমি পাঁচ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করছি। মাদরাসার একটি শ্রেণিকক্ষও ক্লাস করার উপযোগী নয়। বৃষ্টির সময় খুবই কষ্ট হয়। ভাঙা টিনের ফুটো দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়তে থাকে। আমাদের বইখাতা ভিজে যায়। এভাবে চলতে থাকলে মাদরাসাটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে আসবে। পড়ালেখার মানও কমে যাবে।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফরিদুল ইসলাম বলে, মাটির ঘরে ক্লাস করতে হয়, ভয়ে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারি না। আকাশে কালো মেঘ জমলে বা একটু বৃষ্টি হলে আমাদের অনেক সহপাঠী শ্রেণিকক্ষে ভয়ে ঢুকতে চায় না। অনেকেই আবার সেদিন মাদরাসাতেই আসে না। সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলে মাটির ঘরের জীর্ণ টিনশেড দিয়ে পানি পড়ে। ঘরগুলোর দেয়ালে ফাটল ধরেছে। আমাদের আশপাশের মাদরাসাগুলো অনেক উন্নত। সেখানে ভবন আছে, শ্রেণিকক্ষের সংকট নেই। আমাদের দাবি, অন্য স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার মতো আমাদের এখানেও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হোক।
মাদরাসার সহকারী শিক্ষক গোলাম রাব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাটির টিনশেড ঘর কখন যে ভেঙে পড়ে বলা মুশকিল। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী আমাদের শ্রেণিকক্ষের সংকট দীর্ঘদিনের। এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় মাদরাসাটিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ভালো ফলাফল করছে। কিন্তু মাদরাসায় একটা ভবনের অভাবে শিক্ষার্থীদের ভীতিমুক্ত সুন্দর পরিবেশে পাঠদান করানো সম্ভব হয়ে উঠছে না।
মাদরাসার সুপার রফিকুল্লাহ সরকার বলেন, ১৯৯৮ সালে মাদরাসাটির গোড়াপত্তন হলেও সাত বছর পর পাঠদানের জন্য অনুমতি মেলে। শুরুতে তিনটি মাটির শ্রেণিকক্ষ ছিল। পরে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মানোন্নয়ন হওয়ায় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আরও তিনটি পাকা শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়। শ্রেণিকক্ষের সংকট ও জরাজীর্ণ অবস্থায় ২০১৬ সালে ভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য বরাবর আবেদন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত হয়। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্যর কাছে ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করেও কোনো বরাদ্দ মেলেনি। বর্তমানে নতুন ভবন না থাকাসহ শ্রেণিকক্ষ সংকটে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে পড়ালেখা করছে।
মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও অমরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলাল সরকার মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন ভবনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
চিরিরবন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলে এলাহী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদরাসাটিতে শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে। তবে নতুন ভবন নির্মাণ করে দিতে আমরা চেষ্টা করছি। শুধু বাসুদেবপুর হাইউল উলুম দাখিল মাদরাসাটি নয়, উপজেলায় শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকা সব প্রতিষ্ঠানে নতুনভাবে ভবন নির্মাণের জন্য চাহিদা পাঠানো হবে।
এনএ