নেত্রকোণায় বন্যার আশঙ্কা, দ্রুত ধান কেটে নেওয়ার পরামর্শ প্রশাসনের
আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বৈশ্বিক অন্যান্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) ভারতের মেঘালয়সহ কিছু স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে গতকাল ১০ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ভারতে বৃষ্টির ফলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া নেত্রকোণা অঞ্চলেও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এ অবস্থায় নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের পাকা বোরো ধান দ্রুত কেটে নিতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, জেলা কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন।
সোমবার (১১ এপ্রিল) সকাল থেকেই জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পাউবো পৃথকভাবে কৃষকদের এ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত, খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম আরিফুল ইসলাম, মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বুলবুল আহমেদসহ প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তারা মদন ও খালিয়াজুরির বিভিন্ন হাওর ঘুরে কৃষকদের ডেকে এনে দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছেন।
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাকা ধান দ্রুত কর্তন করতে আমরা হাওরাঞ্চলের কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কারণ অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের প্রভাবে নতুন করে জেলার নদ-নদী, হাওরসহ নিম্মাঞ্চলে পানি বাড়বে। আর এ জন্যই হাওরের সোনালি ধান কেটে দ্রুত ঘরে তোলার জন্য বলা হচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতামূলক ও অবহিতকরণ প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।
এ নিয়ে কথা হলে খালিয়াজুরির উপজেলা সদরের কৃষক ফরিদ মিয়া জানান, এলাকায় শ্রমিক সংকট থাকলেও মেশিনের সাহায্যে এখন দ্রুত ধান কাটা যাচ্ছে। প্রায় শতাধিক শ্রমিক একদিনে যে ধান কাটার কথা একটি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন দিয়েও এক দিনে সেই পরিমাণ ধান কাটা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে ধান কাটা-মাড়াইয়ের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জেলায় নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় ১৪৫টি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা চলছে। নতুন করে আরো ১১০টি হারভেস্টার মেশিন দেয়া হয়েছে। হাওরে সোমবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০টি উপজেলায় এ বছর ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলে অর্ধেক জমি রয়েছে। গত ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় হঠাৎ করে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খালিয়াজুরির ধনু নদের পানি ৭ থেকে ৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমায় চলে আসে। পানির প্রবল চাপে খালিয়াজুরি ও মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোতে চাপ বেড়ে যায়।
গত ৩ এবং ৪ এপ্রিল মদনের ফতেপুর হাওর, খালিয়াজুরির কীর্তনখোলা হাওর, লক্ষ্মীপুর হাওরসহ কয়েকটি হাওরের বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়।
এ ছাড়া লেপসাই হাওর, চৈতারা হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের অন্তত ২০টি স্থান হুমকিতে পড়ে। এসব বাঁধের অনেক অংশে ধস ও ফাটল দেখা দেয়। তবে পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোতে সংস্কারকাজ চালায়। এখন পর্যন্ত নেত্রকোনার কোনো ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, গত বুধবার রাত থেকে নেত্রকোণার হাওর-নদীতে পানি কমতে শুরু করায় কৃষকরা ফসল হারানোর শঙ্কা ভুলতে বসেছিলেন। কিন্তু রোববার আবারও ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে মর্মে পূর্বাভাস পেয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
মো. জিয়াউর রহমান/এমএএস