লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেছেন, ইভিএম এমন এক সিস্টেম, নৌকার বাহিরে কেউ ভোট দিলে ধরি হালান যায়। চিটাগাং (চট্টগ্রাম) এক কেন্দ্রে ইভিএমে নৌকা পেয়েছে ২ হাজার ৩০০ ভোট। এক ভোট পায় ধানের শীষ। পরের দিন এ ভোট কে দিছে, ওই ওয়ার্ডের নেতারা তারে ধরি হালান। কত নম্বর ভোট নৌকার বাহিরে গেছে, তা ধরি হালা যায়।

গত বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর কর্মীসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর সেকান্দর সফি একাডেমি মাঠে অনুষ্ঠিত ওই সভায় তিনি ২৪ মিনিট বক্তব্য দেন।

তিনি আরও বলেন, ইভিএম একটি মেশিন। একুলে কে কোথায় টিপ দেয়, বুঝা যায়। সুতরাং উল্টাপাল্টা টিপ দিয়ে রাজাকার ও খন্দকার মোশতাক হবেন না। যারা এদিন উল্টাপাল্টা টিপ দিবেন, পরের দিন মেশিন চেক করলে সিসি ক্যামেরার মতো বের করা যায়।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের উদ্দেশে নুর উদ্দিন নয়ন আরও বলেন, দলের সিদ্ধান্ত, মেয়র পদে ভোট হবে উন্নয়নের জন্য। আর কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নিরপেক্ষ। তারের মতো সোজা। কাউন্সিলর প্রার্থীদেরকে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে হবে। আপনাদের এজেন্টদেরকে নৌকার পক্ষে ওপেন ভোট করতে হবে। কেউ যদি অন্য কারও ভোট করে। ভোটের মাঝখান দিয়ে বা গণনার সময় সমস্যা হলে দলীয় সাপোর্ট পাবেন না।

এ সময় লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এম মেজবাহ উদ্দিন, রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজাদ উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ওইদিন নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের পথসভায় বক্তব্য দিয়েছেন।

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি রামগতি পৌরসভার নির্বাচন। এখানে মেয়র পদে ছয়জন, কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নির্বাচন ঘিরে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে উত্তেজনা ও শঙ্কা। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লক্ষ্মীপুর জেলায় এটাই ইভিএমে প্রথম নির্বাচন।

নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের বক্তব্য প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইভিএমে কে কাকে ভোট দিল, তা চিহ্নিত করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি কেন এসব কথা বলেছেন, আমি জানি না। তার বক্তব্য আমি শুনিনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়েছি।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৯টি ওয়ার্ডে সভা করে বক্তব্য দিয়েছি। এমন কথা বলেছি কি না, আমার মনে নেই। রাজনীতির মাঠ গরম করার জন্য অনেক সময় মুখে ভুলবশত অনেক কিছুই চলে আসে।

রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাহেদ আলী পটু। আর আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন এম মেজবাহ উদ্দিন। তিনি পৌরসভার বর্তমান মেয়র।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাহেদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ডে সভা করে ভোট কারচুপির কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছেন। ইভিএমে কারচুপি আছে, এটি তার বক্তব্যে প্রমাণিত। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। ৯টি কেন্দ্রের ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

রামগতি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কাছে প্রতিটি কেন্দ্রই সমান। কোনো রকম হানাহানি ছাড়াই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হবে। ভোট গ্রহণ ও ভোটারদের নিরাপত্তায় কেন্দ্রগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা থাকবে। কেন্দ্রে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না।

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর