বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম-দ্বিতীয় রংপুরের দুই চিকিৎসক
৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ফলাফলে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৯৬৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডা. শাহ মুবদি-উন-নাফি। দ্বিতীয় হয়েছেন রংপুরের ডা. মালিহা সামিহা শশী।
এছাড়াও প্রশাসন ক্যাডারে রংপুরের আল-আমিন কবির, তানিমা জামান তন্বী, রিশাদসহ আরও অনেকেই বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মেধা তালিকায় রয়েছেন।
বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জনকারী শাহ মুবদি-উন-নাফি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক শাহ মাহফুজুর রহমান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা নাফি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। নাফি ৪২তম বিসিএসে (বিশেষ) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে সহকারী সার্জন হিসেবে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
শাহ মুবদি-উন-নাফি বলেন, অনুভূতি প্রকাশের ভাষা নেই। এক কথায় আলহামদুলিল্লাহ। ৪০তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি, আমি ভীষণ খুশি। স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম হওয়ায় আমার পরিবার, শিক্ষক, সহপাঠীসহ সহকর্মীরা সবাই খুশি।
এদিকে ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে স্বাস্থ্য ক্যাডারে দ্বিতীয় হয়েছেন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার মেয়ে ডা. মালিহা সামিহা শশী। ৪২তম বিসিএসে (বিশেষ) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে শশী সহকারী সার্জন হিসেবে বর্তমানে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। তার স্বামী মাহে আলমও ৩৭তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করা ডা. শশী ছিলেন ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন তিনি। দিনাজপুরের পার্বতীপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন শশী। এরপর ২০১২ সালে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্স সার্জনস (বিসিপিএস) থেকে গাইনি অ্যান্ড অবসে পার্ট-১ এবং লন্ডন থেকে এমআরসিওজি পার্ট-১ সম্পন্ন করেছেন।
মালিহা শশী পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের চৌধুরানী কুতুব্বস গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে। সাইফুল ইসলাম রেলওয়ের ডেপুটি ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার অ্যান্ড চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার। শশীর মা সাবেক প্রধান শিক্ষক নাসিমা আখতার।
নিজের কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্যে ডা. মালিহা সামিহা শশী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। ৪০তম বিসিএসে দ্বিতীয় অবস্থান নিয়ে আবারও সহকারী সার্জন হিসেবে আমাকে সুপারিশ করা হয়েছে। আমার এ অর্জনের জন্য আব্বু-আম্মু আর স্বামী মাহে আলমের অবদান স্বীকার না করলেই নয়। আমি চেষ্টা করেছি মাত্র। তবে সবার উৎসাহ ও সাহস আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
এছাড়া রংপুরের তানিমা জামান তন্বী ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। উচ্চ শিক্ষা (মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার) গ্রহণ করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জেলার বদরগঞ্জের আল-আমিন কবির ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে মেধা তালিকায় ৪০তম হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ এলাকার রিশাদ ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
গতকাল বুধবার (৩০ মার্চ) দুপুরে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে। প্রকাশিত ফলাফলে প্রশাসন ক্যাডারে ২৪৫, পুলিশে ৭২, পররাষ্ট্রে ২৫, কৃষিতে ২৫০, শুল্ক ও আবগারিতে ৭২, সহকারী সার্জন ১১২ ও পশুসম্পদে ১২৭ জনসহ মোট ১ হাজার ৯৬৩ জন বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়া লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডার পদে সুপারিশ করা সম্ভব হয়নি এমন ৮ হাজার ১৬৬ জন প্রার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর