দুই কৃষকের ‘আত্মহনন’ তদন্তে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কমিটি
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ধানখেতে সেচের পানি না পেয়ে দুই কৃষকের আত্মহননের ঘটনা তদন্তে নেমেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সরেজমিন তদন্তে মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) গোদাগাড়ীর ঈশ্বরীপুর এলাকায় যায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।
চার সদস্যের কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং শাখার যুগ্ম সচিব আবু জুবাইর হোসেন বাবুল। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ শরিফুল হক, বিএডিসির নাটোর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন ও বিএমডিএর নওগাঁ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সমশের আলী।
বিজ্ঞাপন
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির ঘটনাস্থলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোদাগাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নজরে এলে গত ২৭ মার্চ এই তদন্ত কমিটি গঠন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসনিম জেবিন বিনতে শেখ স্বাক্ষরিত ওই অফিস আদেশে কৃষক দুজনের মৃত্যুর কারণ এবং সেচের পানি সময়মতো না পাওয়ার কারণ উদঘাটন করে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দুই সপ্তাহ ঘুরেও ধানখেতে সেচের পানি না পেয়ে গত ২৩ মার্চ অসুস্থ হয়ে পড়েন গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের নবাই বটতলা নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই।
দুই কৃষকের পরিবারের দাবি, সেচের পানি না পেয়ে দুজনে ‘বিষ পান’ করেন। তাদের হাসপাতালে না নিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় ফেলে আসেন বিএমডিএর গভীর নলকূপ অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগ সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন।
পরিবার তাদের বাড়িতে নেওয়ার পর ওই দিন রাতেই মারা যান অভিনাথ। রাতেই রবিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ মার্চ রাতে মারা যান তিনিও।
এ ঘটনায় প্রথমে পুলিশ অপমৃত্যু মামলা নেয়। ঘোর আপত্তির মুখে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা নেয় পুলিশ। নিহত অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় গভীর নলকূপ অপারেটর শাখাওয়াত হোসেনকে। ঘটনার পর এলাকাতেই ছিলেন শাখাওয়াত। পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় শেষে লাপাত্তা হয়ে যান তিনি।
শাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সেচের পানি সরবরাহে গাফিলতির অভিযোগ করে আসছেন কৃষকরা। তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের পরও তা আমলে নেয়নি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। পরে এই দুই কৃষকের মৃত্যুর পর বিষয়টি ফের সামনে আসে।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএমডিএর এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারব না।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এনএ