মরা খাল এখন আশীর্বাদ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের দুঃখুমারী খালটি পুনর্খনন করা হয়েছে। এতে সারা বছরই খালে পানি থাকছে। খালের দুই পাড়ের কৃষকরা তাদের প্রয়োজন মতো পানি ব্যবহার করতে পারছে। এর ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর একনেক সভায় অনুমোদন পায় ৬৪ জেলায় অবস্থিত ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনর্খনন প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৬ টাকা ব্যয়ে দুঃখুমারী খালটি পুনর্খনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সিংড়িবনি উপ-প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের দুঃখুমারী রেগুলেটর থেকে বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের রসুলপুর পর্যন্ত ৪.২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল পুনর্খনন করা হয়। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর পুনর্খননের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে কাজ শেষ হতে দেরি হয় এক মাসের বেশি।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, এই খাল পুনর্খননের ফলে বর্ষা মৌসুমে দুই পাড়ে থাকা ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা থাকবে না। পাশাপাশি অতিরিক্ত পানি দ্রুত নদীতে নিষ্কাশন হবে। এছাড়াও গভীর করে খনন করায় বর্ষা মৌসুমের পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যাবে। অন্তত আগামী ১০ বছর সময়ের মধ্যে সারা বছর পানি ধরে রাখবে দুঃখুমারী খাল। এতে মৎস্যচাষের জন্য রাজস্ব পাবে সরকার।
স্থানীয় কৃষক শরিফুল ইসলাম খালের পাশেই কয়েক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছেন বলসুন্দরী জাতের কুল। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, খালঘেঁষা জমি চাষাবাদ করলেও আমরা কোনো দিন এর সুফল পাইনি। উল্টো বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। বর্তমানে খালটি খননের ফলে আর কোনো জলাবদ্ধতা থাকবে না। এমনভাবে খনন করা হয়েছে, যাতে পানি আটকে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি সারা বছর পানি থাকবে। এতে কৃষিকাজেও ব্যবহার করা যাবে।
আমচাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, খালের পাশে ৮ বিঘা জমিতে আমবাগান রয়েছে। আম চাষাবাদ করতে গিয়ে বছরের বিভিন্ন সময় গাছে পানি দিতে হয়। অন্যকোনো ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হয়। এতে খরচও বেশি হয় এবং পরিমাণমতো পানিও দিতে পারি না। খাল খননের কারণে খুব সহজে, যেকোনো সময় আমবাগানে সেচ দেওয়া যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আপন রেজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৫ বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে খালটি খরস্রোতা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন খনন না করায় মরা খালে পরিণত হয়েছিল। খালটি আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এমনভাবে খনন করা হয়েছে যাতে সারা বছর পানি থাকবে। পাশাপাশি মাছচাষ করা যাবে। ফলে এক দিকে পরিত্যক্ত খালে মাছ চাষ হবে, অন্যদিকে সরকার এ থেকে রাজস্ব পাবে।
ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, দুঃখুমারী খালটির পাশের জমিগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজে সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হয়। পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় এই খালের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা যায় না। ফলে চাষাবাদে খরচ যেমন বাড়ছে তেমনি আবাদযোগ্য অনেক জমি পতিত থেকে যাচ্ছে। খাল খননের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। এতে সেচ কাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমবে। কৃষকের খরচ কমবে। এর ফলে পতিত জমি কমে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়বে।
চাঁপাই গ্রামীণ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাসেম আলী বলেন, মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে ক্রমশ নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। এতে দেশে মরুকরণের সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুপেয় পানি ও কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। এই খাল খননের ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি ব্যবহার করে সেচকাজ চালানো যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফ সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে নানা রকম পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৬৪টি জেলায় অভ্যন্তরে ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনর্খনন প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৬ টাকা ব্যয়ে দুঃখুমারী খালটি পুনর্খনন করা হয়েছে। এতে এখন সারা বছর পানি থাকবে, যা খালের দুই পাড়ের কৃষকরা ব্যবহার করতে পারবে। এতে পতিত জমি থাকবে না এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া মৎস্যচাষ করার উপযোগী করে খালটি খনন করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম/এসপি